এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

গল্প  :  বিন্দুর ছেলে         
পরিচ্ছেদ: / 9
পৃষ্ঠা: / 48
নয়

কতদিন হইতে যে বিন্দু অনাহারে নিজেকে ক্ষয় করিয়া আনিতেছিল, তাহা কেহই জানিতে পারে নাই। বাপের বাড়ি আসিয়া জ্বর হইল। দ্বিতীয় দিন দুই-তিনবার মূর্ছা হইল—তাহার শেষ মূর্ছা আর ভাঙ্গিতে চাহিল না। অনেক চেষ্টায় অনেক পরে যখন তাহার চৈতন্য ফিরিয়া আসিল, তখন দুর্বল নাড়ী একেবারে বসিয়া গিয়াছে। সংবাদ পাইয়া মাধব আসিলেন। সে স্বামীর পায়ের ধূলা মাথায় লইল, কিন্তু দাঁতে দাঁত চাপিয়া রহিল, শত অনুনয়েও একফোঁটা দুধ পর্যন্ত গিলিল না।

মাধব হতাশ হইয়া বলিলেন, আত্মহত্যা ক’চ্চ কেন?

বিন্দুর নিমীলিত চোখের কোণ বাহিয়া জল পড়িতে লাগিল। কিছুক্ষণ পরে আস্তে আস্তে বলিল, আমার সমস্ত অমূল্যর। শুধু হাজার-দুই টাকা নরেনকে দিয়ো, আর তাকে পড়িয়ো, সে আমার অমূল্যকে ভালবাসে।

মাধব দাঁত দিয়া জোর করিয়া নিজের ঠোঁট চাপিয়া কান্না থামাইলেন।

বিন্দু ইঙ্গিত করিয়া তাঁহাকে আরও কাছে আনিয়া চুপি চুপি বলিল, সে ছাড়া আর কেউ যেন আমাকে আগুন না দেয়।

মাধব সে ধাক্কা সামলাইয়া লইয়া কানে কানে বলিলেন, দেখবে কাউকে?

বিন্দু ঘাড় নাড়িয়া বলিল, না থাক।

বিন্দুর মা আর একবার ঔষধ খাওয়াইবার চেষ্টা করিলেন, বিন্দু তেমনি দৃঢ়ভাবে দাঁত চাপিয়া রহিল।

মাধব উঠিয়া দাঁড়াইয়া বলিলেন, সে হবে না বিন্দু। আমাদের কথা শুনলে না, কিন্তু যাঁর কথা ঠেলতে পারবে না, আমি তাঁকে আনতে চললুম। শুধু এই কথাটি আমার রেখো, যেন ফিরে এসে দেখেতে পাই, বলিয়া মাধব বাহিরে আসিয়া চোখ মুছিলেন। সে-রাত্রে বিন্দু শান্ত হইয়া ঘুমাইল।

তখন সবেমাত্র সূর্যোদয় হইতেছিল; মাধব ঘরে ঢুকিয়া দীপ নিবাইয়া জানালা খুলিয়া দিতেই বিন্দু চোখ চাহিয়া সুমুখেই প্রভাতের স্নিগ্ধ আলোকে স্বামীর মুখ দেখিয়া মৃদু হাসিয়া বলিল, কখন এলে?

এই আসচি। দাদা পাগলের মত ভয়ানক কান্নাকাটি কচ্চেন।

বিন্দু আস্তে বলিল, তা জানি। তাঁর একটু পায়ের ধুলো এনেচ?

মাধব বলিলেন, তিনি বাইরে বসে তামাক খাচ্চেন। বৌঠান হাত-পা ধুচ্চেন, অমূল্য গাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়েছিল, ওপরে শুইয়ে দিয়েচি, তুলে আনব?