এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

গল্প  :  বিন্দুর ছেলে         
পরিচ্ছেদ: / 9
পৃষ্ঠা: / 48
মাধব রান্নাঘরে অন্ধকার দেখিয়া, এ ঘরে ফিরিয়া আসিয়া অন্ধকারে অন্নপূর্ণাকে দেখিয়া শুষ্কস্বরে বলিল, বৌঠান, শুনেচ বোধ হয়?

অন্নপূর্ণা মুখ তুলিতে পারিলেন না।

মাধব কহিল, অমূল্যর যাওয়া একবার দরকার, বোধ করি শেষ সময় উপস্থিত হয়েচে।

অন্নপূর্ণা উপুড় হইয়া পড়িয়া ফুকারিয়া উঠিলেন। যাদব ও-ঘর হইতে পাগলের মত ছুটিয়া আসিয়া বলিলেন,—এমন হয় না মাধু! আমি বলছি হয় না! আমি জ্ঞানে-অজ্ঞানে কাউকে দুঃখ দিইনি, ভগবান আমাকে এ-বয়সে কখনো এমন শাস্তি দেবেন না।

মাধব চুপ করিয়া রহিল।

যাদব বলিলেন, আমাকে সব কথা খুলে বল্‌—আমি গিয়ে মাকে ফিরিয়া আনবো—তুই উতলা হস্‌নে মাধু—গাড়ি সঙ্গে আছে?

মাধব বলিল, আমি উতলা হইনি দাদা, আপনি নিজে কি-রকম কচ্চেন?

কিছুই করিনি। ওঠ বড়বৌ, আয় অমূল্য—

মাধব বাধা দিয়া বলিল, রাত্রিটা যাক না দাদা।

না না, সে হবে না—তুই অস্থির হ'সনে মাধু—গাড়ি ডাক্‌, নইলে আমি হেঁটে যাব।

মাধব আর কিছু না বলিয়া গাড়ি আনিলে চারজনেই উঠিয়া বসিলেন। যাদব বলিলেন, তার পরে?

মাধব কহিল, আমি ত ছিলুম না—ঠিক জানিনে। শুনলুম, দিন-চারেক আগে খুব জ্বরের ওপর ঘন ঘন মূর্ছা হয়, তার পরে এখন পর্যন্ত কেউ ওষুধ কি এক ফোঁটা দুধ অবধি খাওয়াতে পারেনি। ঠিক বলতে পারিনে কি হয়েচে, কিন্তু আশা আর নেই।

যাদব জোর দিয়া বলিয়া উঠিলেন, খুব আছে, একশ'বার আছে। মা আমার বেঁচে আছেন। মাধু, ভগবান আমার মুখ দিয়ে এই শেষ বয়সে মিথ্যে কথা বার করবেন না—আমি আজ পর্যন্ত মিথ্যে বলিনি।

মাধব তৎক্ষণাৎ অবনত হইয়া অগ্রজের পদধূলি মাথায় লইয়া নিঃশব্দে বসিয়া রহিল।