এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

গল্প  :  বিন্দুর ছেলে         
পরিচ্ছেদ: / 9
পৃষ্ঠা: / 48
বিন্দু কিছুক্ষণ স্থির হইয়া থাকিয়া 'না, ঘুমোক' বলিয়া ধীরে ধীরে পাশ ফিরিয়া অন্যদিকে মুখ করিয়া শুইল।

অন্নপূর্ণা ঘরে ঢুকিয়া তাহার শিয়রের কাছে বসিয়া মাথায় হাত দিতেই সে চমকিয়া উঠিল। অন্নপূর্ণা মিনিট-খানেক নিজেকে সংবরণ করিয়া লইয়া বলিলেন, ওষুধ খাসনি কেন রে ছোটো, মরবি বলে?

বিন্দু জবাব দিল না। অন্নপূর্ণা তাহার কানের উপর মুখ রাখিয়া চুপি চুপি বলিলেন, আমার বুক ফেটে যাচ্ছে, তুই বুঝতে পাচ্চিস?

বিন্দু তেমনি চুপি চুপি উত্তর দিল, পাচ্চি দিদি।

তবে মুখ ফেরা। তোর বঠ্‌ঠাকুর বাড়ি নিয়ে যাবার জন্যে নিজে এসেচেন। তোর ছেলে কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়েচে। কথা শোন, মুখ ফেরা।

বিন্দু তথাপি মুখ ফিরাইল না। মাথা নাড়িয়া বলিল, না দিদি, আগে বল—

অন্নপূর্ণা বলিলেন, বলচি রে ছোটো, বলচি, শুধু তুই একবার বাড়ি ফিরে আয়।

এই সময় যাদব দ্বারের কাছে আসিয়া দাঁড়াইতে অন্নপূর্ণা বিন্দুর মাথার উপর চাদর টানিয়া দিলেন। যাদব একমুহূর্ত আপাদমস্তক বস্ত্রাবৃতা তাঁহার অশেষ স্নেহের পাত্রী ছোটবধূর পানে চাহিয়া থাকিয়া অশ্রু নিরোধ করিয়া বলিলেন, বাড়ি চল মা, আমি নিতে এসেছি।

তাঁহার শুষ্ক শীর্ণ মুখের দিকে চাহিয়া উপস্থিত সকলের চক্ষুই সজল হইয়া উঠিল। যাদব আর একমুহূর্ত মৌন থাকিয়া বলিলেন, আর একদিন যখন এতটুকুটি ছিলে মা, তখন আমিই এসে আমার সংসারের মা-লক্ষ্মীকে নিয়ে গিয়েছিলাম। আবার আসতে হবে ভাবিনি; তা মা শোন, যখন এসেচি, তখন হয় সঙ্গে করে নিয়ে যাব, না হয়, ও-মুখো আর হব না। জান ত মা, আমি মিথ্যে কথা বলিনে!

যাদব বাহিরে চলিয়া গেলেন।

বিন্দু মুখ ফিরাইয়া বলিল, দাও দিদি কি খেতে দেবে। আর অমূল্যকে আমার কাছে শুইয়ে দিয়ে তোমরা সবাই বাইরে গিয়ে বিশ্রাম কর গে। আর ভয় নেই—আমি মরব না।