এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

পুস্তকাকারে অপ্রকাশিত রচনা  :  দিন-কয়েকের ভ্রমণ-কাহিনী         
পরিচ্ছেদ: / 1
পৃষ্ঠা: / 7
সেই ক্রুদ্ধ মুখের নামকীর্তন ভাগ্যে গিয়া গৌর-নিতাইয়ের কানে পৌছায় না! জন-কয়েক কম-বয়েসী চালাক বৈষ্ণবী দেখিলাম, তালে তালে শুধু হাঁ করে এবং ঠোঁট নাড়ে। চেঁচাইয়া শক্তি ক্ষয় করে না। কিন্তু সকলের মুখে-চোখেই ঠিক পাউন্ডে আটকানো গরু-বাছুরের ন্যায় অবসন্ন করুণ চাহনি। দেখিলে ক্লেশ বোধ হয়। মারবাড়ীরা কিন্তু অত্যন্ত উৎফুল্ল। তাহারা নিজেদের সদনুষ্ঠানের কথা সগর্বে বারংবার বলিতে লাগিল। আর একটা ইঙ্গিতও প্রকারান্তরে করিতে ছাড়িল না যে, কোন একটা উপায়ে ইহাদের আবদ্ধ না রাখিতে পারিলে অসৎপথে যাইবারও বিলক্ষণ সম্ভাবনা।

সম্ভাবনা ত আছেই। তথাপি, ফিরিবার পথে আমাদের কেবলই মনে হইতে লাগিল, ইহার প্রয়োজন ছিল না,—এই ফন্দি অসাধু! ধর্ম বস্তুটাকে এমন করিয়া উপহাস করা অন্যায়! ছলে, বলে, কৌশলে মানুষকে ধার্মিক করিতেই হইবে—ইহা কিসের জন্য? এই যে মারবাড়ী ধনী কতকগুলি নিরুৎসুক উদাসীন বুভুক্ষু প্রাণীকে আহারের লোভে প্রলুব্ধ করিয়া ভগবানের নাম-কীর্তনে বাধ্য করিয়াছে, ইহার মূল্য কতটুকু? অথচ, এইরূপ জবরদস্তির দ্বারাই ধর্মচর্চায় নিরত করা সকল ধর্মেরই একটা প্রচলিত পদ্ধতি। কোনটা বা ব্যক্ত, কোনটা বা গুপ্ত, এই যা বিভেদ। এবং মারবাড়ী প্রসন্নচিত্তে ইহাই অনুসরণ করিয়া চলিয়াছে মাত্র। এই ব্যক্তিকেই আর একদিন প্রশ্ন করিয়াছিলাম, তোমরা এত খরচ কর, কিন্তু সেবাশ্রমে সাহায্য কর না কেন? সে স্বচ্ছন্দে জবাব দিল, সেবাশ্রমের সন্ন্যাসী ও ব্রহ্মচারীরা ঔষধ দেয়, যে-সে জাতের মড়া ফেলে, রোগীর সেবা করে—এইসব কি সাধুর কাজ? সাধু সুদ্ধাচারী হইবে, ভজন-সাধন করিবে, তবেই ত সে সাধু।

মনে মনে বলিলাম, তাই বটে! তা না হইলে আর আমাদের এই দশা!