এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

পুস্তকাকারে অপ্রকাশিত রচনা  :  দিন-কয়েকের ভ্রমণ-কাহিনী         
পরিচ্ছেদ: / 1
পৃষ্ঠা: / 7
দিন-কয়েকের ভ্রমণ-কাহিনী

নলিনী,- তোমার যাবার পরে আমি ভাবিয়া দেখিলাম যে, দিন-কয়েক বাহিরে যাওয়ার অজুহাতে ভ্রমণ-বৃত্তান্ত লেখার বিপদ আছে। প্রথম, এই জাতীয় লেখা আমার আসে না; অনধিকারচর্চা অপরাধে আমার পরম স্নেহাস্পদ শ্রীমান্‌ জলধর ভায়া হয়ত রাগ করিবেন। লোকেও অপবাদ দিয়া বলিবে, এ শুধু তাঁহার নৈহাটী ও বরানগর ভ্রমণ-বৃত্তান্তের নিছক নকল। দ্বিতীয় বিপদ শ্রীযুক্ত প্রমথ চৌধুরী মহাশয়। কারণ, আমি যদি বলি, দিল্লীতে এবার রেলওয়ে স্টেশন দেখিয়া আসিলাম, তিনি হয়ত কাগজে প্রতিবাদ করিয়া বলিবেন, ঔপন্যাসিক শরৎচন্দ্র উপন্যাস লিখিয়াছেন। দিল্লীতে স্টেশন বলিয়া কোন-কিছুই নাই, ওখানে রেলগাড়িই যায় না। অতএব, মুশকিল বুঝিতেই পারিতেছ। তবে, গোটাকয়েক নিজের মনের কথা বলা যাইতে পারে। চৌধুরী-মশায় উপন্যাস বলিলেও দুঃখ নাই, শ্রীমান্‌ রায়বাহাদুর ভ্রমণ-বৃত্তান্ত নয় বলিলেও আপসোস হইবে না।

আমার যাওয়ার ইতিহাস এই প্রকার।

প্রায় মাসখানেক পূর্বে বন্ধুরা একদিন বলিলেন, দেশোদ্ধার করিতে অনেকে দিল্লী কংগ্রেসে যাইতেছেন, তুমিও চল। অস্বীকার করিয়া ফল নাই জানিয়া রাজী হইলাম। ভরসা ছিল, অন্যান্য বারের মত এবারেও ঠিক যাইবার দিন পেটের অসুখ করিবে। কিন্তু এবার তাঁহারা এরূপ দৃষ্টি রাখিলেন যে, তাহার সুযোগই ঘটিল না, রওনা হইতে হইল। সন্ধ্যা নাগাদ আমার প্রবাসের বাহন ভোলার স্কন্ধে আত্মসমর্পণ করিয়া মেল ট্রেনে চাপিয়া বসিলাম। ট্রেনের ইতিহাস সংক্ষিপ্ত। আফিমের ঘোরে সারারাত্রি ধরিয়া আমি তামাক খাইলাম, এবং আমার একমাএ অপরিচিত সহযাত্রী আমাশার বেগে আলো জ্বালাইয়া সারারাত্রি ধরিয়া পায়খানায় গেলেন। ভোর নাগাদ আমিও শ্রান্ত হইয়া পড়িলাম, তাঁহারও হাত-পা অশক্ত অবশ হইয়া আসিল। সুতরাং আলো নিবাইয়া উভয়েই কিয়ৎকাল নিদ্রা দিলাম। সকালে কোন একটা স্টেশনে নামিবার সময় জলের সোরাইটা আমার তিনি দিলেন ভাঙ্গিয়া, এবং উহার টাইম-টেবল্‌টা আমি রাখিলাম বালিশের নীচে চাপিয়া। অতঃপর বাকী পথটা একাকী নিরুপদ্রবে কাটিল, অবিশ্রাম তামাক খাইয়া গাড়ির ফুলকাটা সাদা ছাতটা কালো করিয়া দিলাম।

এবার দিল্লী কংগ্রেসের পালা। এ সম্বন্ধে এত লোকে এত কলরব এত আস্ফালন করিয়াছে, এত গালি দিয়াছে, জ্বালা ও উদ্দাম আবর্তনের জন্মদান করিয়াছে যে, সেখানে অন্তর বস্তুটি আমার প্রবেশ করিবার বাস্তবিকই পথ খুঁজিয়া পায় নাই। কেবল সাধারণের পরিত্যক্ত, অতি সঙ্কীর্ণ নিরালা একটুখানি পথ সন্ধান করিয়া পাইয়াছিলাম, এবং সেইজন্যই শুধু আমার মনে হয়, মনের মধ্যেটা আমার নিছক ব্যর্থতার গ্লানিতে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিতে পারে নাই।