এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

অজ্ঞাত রচনা  :  অন্তর্যামী         
পরিচ্ছেদ: / 1
পৃষ্ঠা: / 3
অন্তর্যামী

ভীমচাঁদ নিজের বাঁ হাতের উপর সজোরে ডান হাত চাপড়াইয়া তাহার ষোড়শী স্ত্রীর কাছে আস্ফালন করিয়া কহিল, 'মানুষের মুখের পানে চেয়ে যদি তার মনের কথাই না জানতে পারলুম ত এ দুটো চোখ বৃথাই রাখি! ওগো আমাকে ফাঁকি দেওয়া সোজা কাজ নয় !'

তাহার স্ত্রী বিনোদিনী, রাগ করিয়া বলিল, 'ওই অহঙ্কারেই তুমি মাটি হয়ে গেলে! বরং, আমি ত বলি তোমাকে ঠকানোর চেয়ে সোজা কাজ আর এ পৃথিবীতে নেই।'

ভীমচাঁদ মহা অবজ্ঞাভরে হাসিয়া বলিল, 'ভুল, ভুল, মস্ত ভুল! আমাকে দেখতে বোকার মত, কিন্তু, আসলে তা নয়! আমি একবার যাকে চেয়ে দেখব, তার পেটের কথা টেনে আনব, সে তুমি নিশ্চয় জেনে রেখো।'

'রেখেচি' বলিয়া বিনোদিনী ক্ষণকাল মৌন থাকিয়া শেষে উদাসভাবে বলিল, 'আর পারলেই ভাল। তা ছাড়া আমার কি! তুমি স্বামী, খাওয়াবে পরাবে—যা ভাল বুঝবে কোরবে। কিন্তু, এই কথা আমিও বলে রাখলুম, তোমার নতুন মা তোমাকে ফাঁকি যদি না দেন ত আমাকে কুকুর বলে ডেকো।'

ভীমচাঁদ এক মুহূর্ত তাহার স্ত্রীর প্রতি চাহিয়া থাকিয়া সহসা বলিয়া উঠিল, 'আচ্ছা' আজই আমি তা জেনে আসচি। নতুন মা'র কি মতলব এক্ষণি ফিরে এসে যদি না বলতে পারি ত, আমার নাম ভীমচন্দ্রই নয়।' বলিয়া সে বাটীর বাহির হইয়া গেল।

এইখানে একটু গোড়ার কথা বলিয়া রাখি। ভীমের পিতা শিবদাসবাবু সঙ্গতিপন্ন লোক। তাহার স্ত্রী, ছয় বৎসরের শিশু ভীমকে রাখিয়া স্বর্গারোহন করিলে, শিবদাস পত্নীশোক আর সহ্য করিতে না পারিয়া সেই মাসের শেষেই স্বগ্রামস্থা এক দরিদ্র বিধবার বয়স্থা কন্যা সুখদাকে বিবাহ করিলেন এবং মাতা ও কন্যা উভয়কেই নিজের সংসারে সুপ্রতিষ্ঠিত করিলেন। অতঃপর নিরতিশয় দুরন্ত ও অবাধ্য ভীমকে সংসারে রাখা একপ্রকার অসম্ভব হইয়া পড়িল। তাহার মাতুল সংবাদ পাইয়া ভীমকে লইয়া গেলেন, মানুষ করিলেন এবং যথা সময়ে বিবাহ দিয়া পাটের কাজে নিযুক্ত করিয়া দিলেন।

তাহার পর বহু বৎসর গত হইয়াছে। বৎসর তিনেক পূর্বে ভীমচাঁদ পত্নী বিনোদিনীকে লইয়া বাটী ফিরিয়া আসে। কিন্তু , এবারেও এক পরিবারে বসবাস করার সুবিধা হইল না। বিনোদিনীর সহিত সুখদা ও তাহার মাতার, এবং ভীমের সহিত সুখদার তিন পুত্রের বনিবনাও না হওয়ায় বৃদ্ধ পিতা শিবদাস স্পষ্ট কথা বলিতে বাধ্য হইলেন। ভীম আলাদা বাসা ভাড়া করিল। তখনও সে বেশি কিছু উপার্জন করিতে পারিত না, তাই, একটু দুঃখে-কষ্টেই দিন কাটিতেছিল। আমি এই সময়ের ইতিহাসটাই বলিতে বসিয়াছি।