এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

অজ্ঞাত রচনা  :  অন্তর্যামী         
পরিচ্ছেদ: / 1
পৃষ্ঠা: / 3
বিনোদিনী চোখ তুলিয়া কহিল, 'আবার কি?'

ভীম একগাল হাসিয়া ফেলিয়া বলিল—'মিথ্যে মিথ্যে, সব মিথ্যে।'

'কি মিথ্যে?'

'এই তোমার উইল করার কথা। বললুম তোমাকে, একি হতে পারে? সারাদিন আমি ও বাড়িতে আছি, আমাকে ফাঁকি দেবে কে? আমি জানতে পারলুম না, আর জানলে যত পাড়ার লোকে?'

বিনোদিনী স্বামীর কথা বিশ্বাস করিল না, প্রশ্ন করিল, 'তুমি কি জেনে এলে তাই বল না?' ভীম তেমনি আস্ফালন করিয়া কহিল, 'মিথ্যে তাই জেনে এলুম। একটা সম্ভব-অসম্ভব আছে ত! এ কি হতে পারে আমাকে ফাঁকি আর আমি জানলুম না!' বিনোদিনী নিঃশব্দে চাহিয়া রহিল। ভীম বলিতে লাগিল, 'গিয়েই বললুম, 'মা শোনো'—তিনি মুখ তুলতেই আমি তাঁর চোখের দিকে চেয়ে রইলুম। ওগো, এটা আমার ঈশ্বরদত্ত শক্তি—যে কোন মানুষ হোক না, তার চোখ দেখে আমি মনের কথা ছাপার অক্ষরের মত পড়ে ফেলতে পারি। পড়েও ফেললুম।' বিনোদিনী একটা নিঃশ্বাস ফেলিয়া বলিল, 'বেশ করেচ। আমি বলি বুঝি, সত্যই কিছু জেনে এসেচ।'

ভীম ভয়ানক উত্তেজিত হইয়া জবাব দিল, 'আবার সত্যি কি হবে শুনি? উইল হল, আমি জানলুম না, মা জানলেন না আর জানলে এখানে বসে তুমি? মা আমার কেঁদে ফেলে বললেন, বাবা, আমি সৎমা বলেই—আবার কি চাও তুমি?' বিনোদিনী আর তর্ক করিল না। সে স্বামীকেও চিনিত, তাঁর বিমাতাটিকেও চিনিত। আর একটা নিঃশ্বাস ফেলিয়া মৃদুস্বরে কহিল, 'হলেই ভাল। আচ্ছা, যাও তুমি স্নান করে এসো, আমার রান্না হয়ে গেছে।'

ভীম, স্ত্রীর ভাব দেখিয়া বুঝিল, সে কিছুই বিশ্বাস করে নাই। তাই ক্ষুণ্ণ হইয়া বলিল, 'আমার কথায় তোমার বিশ্বাস হয় না, বিশ্বাস হয় পরের কথায়। আচ্ছা, তখন টের পাবে—কিন্তু, আমি ত এখানে খেতে পারব না—আমাকে এখনি ফিরে যেতে হবে ' বলিয়া ভীমচাঁদ যেমন করিয়া আসিয়াছিল, তেমনি করিয়া চটি-জুতার পটাপট শব্দ করিয়া বাহির হইয়া গেল।

পিতৃশ্রাদ্ধ ভীমচাঁদ মহা আড়ম্বরে সম্পন্ন করিল। সদ্য বিধবা সুখদা কাঁদিয়া কাটিয়া জানাইলেন, লোহার সিন্দুকে কিছু নাই। ভীমচাঁদ জ্যেষ্টপুত্র, সুতরাং সমস্ত কর্তব্য তাহারই, সে স্ত্রীর গহনা বন্ধক দিয়া, এবং এক পাটের মহাজনের নিকট খত লিখিয়া দু' হাজার টাকা কর্জ করিয়া সমস্ত ব্যয়ভার নিজেই বহন করিল। শ্রাদ্ধ-শেষে রেজেস্ট্রি-করা উইল বাহির হইল, উকিল সর্বসমক্ষে পড়িয়া শুনাইলেন। তাহাতে শিবদাসবাবু, দ্বিতীয় পক্ষের তিনটি ছেলেকেই সমস্ত বিষয়-সম্পত্তি তিন সমান ভাগে দিয়া গিয়াছেন, ভীমের ভাগ্যে এক কানাকড়িও নাই। ভীম শুষ্ক মুখে অধোবদনে বসিয়া রহিল।...