বুঝি, ছোঁয়াছুঁয়ি আচার-বিচারের অর্থ নেই, তবু মেনে চলি; বুঝি, জাতিভেদ মহা-অকল্যাণকর, তবু নিজের আচরণে তাকে প্রকাশ করিনে, বুঝি ও বলি, বিধবা-বিবাহ উচিত তবু নিজের জীবনে তাকে প্রত্যাহার করি, জানি খদ্দর পরা উচিত, তবু বিলাতী কাপড় পরি, একেই বলি আমি অসত্যাচরণ। দেশের দুর্দশা ও দুর্গতির মূলে এই মহাপাপ যে আমাদের কতখানি নীচে টেনে এনেছে, এ হয়ত আমরা কল্পনাও করিনে। এমনিধারা সকল দিকে। দৃষ্টান্ত দিয়ে সময় অতিবাহিত করবার প্রয়োজন নেই—প্রার্থনা, দীনতা ও কাপুরুষতার এই গভীর পঙ্ক থেকে দেশের যৌবন যেন মুক্তিলাভ করতে পারে। ভুল বুঝে ভুল কাজ করায় অজ্ঞতার অপরাধ হয়, সেও ঢের ভাল, কিন্তু ঠিক বুঝে বেঠিক কাজ করায় শুধু সত্যভ্রষ্টতার নয়, অসত্যনিষ্ঠার প্রত্যবায় হয়। তার প্রায়শ্চিত্তের যখন দিন আসে, তখন সমস্ত দেশের শক্তিতে কুলোয় না। এ কথা মনে রাখতে হবে, সত্যনিষ্ঠাই শক্তি, সত্যনিষ্ঠাই সমস্ত মঙ্গলের আধার এবং ইংরাজিতে যাকে বলে tenacity of purpose, সেও এই সত্যনিষ্ঠারই বিকাশ। তাই বারংবার স্বদেশের যৌবনের কাছে এই আবেদনই করি, সত্য-নিষ্ঠাই যেন তাদের ব্রত হয়। কেন না, নিশ্চয় জানি এই ব্রতধারণই তাদের সম্মুখের সমস্ত বাধা অপসারণ করে যথার্থ কল্যাণের পথ উদ্ঘাটিত করে দেবে। প্রোগ্রাম ও পথের জন্য দুশ্চিন্তা করতে হবে না।
আজকের কার্য-তালিকায় একটা বিষয় আছে, সে হচ্ছে লাঠি, তলোয়ার ও ছোরা খেলা। এতদিন physical culture-এর দিকে ছাত্রসমাজ একেবারে বিমুখ হয়ে পড়েছিল। মনে হয়, এইটে ধীরে ধীরে আবার যেন ফিরে আসছে। এই প্রত্যাগমনকে আমি সর্বান্তঃকরণে অভিনন্দিত করি। তারা দেখেছে, দুর্বল শক্তিহীনেরই শুধু লাথির ঘায়ে প্লীহা ফাটে। শক্তিমান পাঠান-কাবলীওয়ালার ফাটে না। ফাটে বাঙ্গালীর। বোধ হয় বারংবার এই ধিক্কারেই শারীরিক শক্তি অর্জনের স্পৃহা ফিরে এলো। physical culture-এ শক্তি বাড়ে, আত্মরক্ষার কৌশল আয়ও হয়, সাহস বৃদ্ধি পায়—কিন্তু তবুও এ কথা ভুললে চলবে না যে, এ সমস্তই দেহের ব্যাপার। অতএব এই-ই সবটুকু নয়। সাহস বাড়া এবং নির্ভীকতা অর্জন কোনমতেই এক বস্তু নয়। একটা দৈহিক, অন্যটা মানসিক।