দেহের শক্তি ও কৌশল-বৃদ্ধিতে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও অকৌশলীকে পরাভূত করা যায়, কিন্তু নির্ভয়ের সাধনায় শক্তিমানকে পরাস্ত করা যায়,—সংসারে কেউ তাকে বাধা দিতে পারে না, সে হয় অপরাজেয়। তাই প্রারম্ভে যে কথা একবার বলেছি, তাই পুনরুক্তি করে আবার বলি যে, এই অভয় আশ্রম সেই সাধনাতেই নিযুক্ত। এঁদের কৃচ্ছ্রসাধনা তারই একটা সোপান, একটা উপায়। এ তাঁদের পথ, শেষ লক্ষ্য নয়। অভাব, দুঃখ, ক্লেশ, প্রতিবেশীর লাঞ্ছনা, বন্ধুজনের গঞ্জনা, প্রবলের উৎপীড়ন, কোন কিছুই যেন এঁদের মুক্তির পথকে বাধাগ্রস্ত না করতে পারে—এ-ই এঁদের একান্ত পণ। এই ত নির্ভয়ের সাধনা এবং তাই সত্যনিষ্ঠাই এঁদের গন্তব্য-পথকে নিরন্তর আলোকিত করে চলেছে। খদ্দর প্রচার, জাতীয় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, হাসপাতাল খোলা, আর্তের সেবা, এ-সব ভাল কি মন্দ, নির্ভীকতা ও দেশের স্বাধীনতা অর্জনে এ-সমস্ত কাজের কি না,—এ-সব প্রশ্ন বৃথা! এঁদের সত্যনিষ্ঠা কাল যদি এঁদের চক্ষে অন্য পথ নির্দেশ করে, এই সমস্ত আয়োজন নিজের হাতে ভেঙ্গে ফেলতে অভয় আশ্রমীদের একমুহূর্ত বিলম্ব হবে না—এই আমার বিশ্বাস। এবং কামনা করি, এ বিশ্বাস যেন আমার সত্য হয়।
আমার বয়েস অনেক হলো, তবু এখানে এসে অনেক কিছুই শিখলাম। এই অভয় আশ্রমে অতিথি হতে পারার সৌভাগ্য আমার শেষদিন পর্যন্ত মনে থাকবে।
পরিশেষে, এই ছাত্র ও যুব-সঙ্ঘকে আশীর্বাদ করি, যেন এঁদের মতই সত্যনিষ্ঠা তাঁদেরও জীবনের ধ্রুবতারা হয়।
আপনারা আমার সকৃতজ্ঞ অন্তরের নমস্কার গ্রহণ করুন।