এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

উপন্যাস  :  দত্তা         
পরিচ্ছেদ: / 26
পৃষ্ঠা: / 132
বিজয়ার মুখ ফ্যাকাশে হইয়া গেল। কহিল, আপনি কি আমার হিন্দু-বিবাহ দেবেন?

দয়াল কহিল, হিন্দু—বিবাহ কি বিবাহ নয় মা? কিন্তু সাম্প্রদায়িক মত মানুষকে এমনি বোকা করে আনে যে, কাল সমস্ত বেলাটা ভেবে ভেবেও এই তুচ্ছ কথাটার কোন কুল- কিনারা খুঁজে পাইনি। কিন্তু নলিনী আমাকে একটি মুহূর্তে বুঝিয়ে দিলে। বললে, মামা, তাঁর বাবা তাঁকে যাঁর হাতে দিয়ে গেছেন, তোমরা তাঁর হাতেই তাঁকে দাও; নইলে ব্রাহ্ম— বিবাহের ছল করে যদি অপাত্রে দান কর ত অধর্মের সীমা থাকবে না। আর মনের মিলনই সত্যিকার বিবাহ। নইলে বিয়ের মন্তর বাংলা হবে কি সংস্কৃত হবে, ভট্‌চায্যিমশাই পড়াবেন কিংবা আচার্যমশাই পড়াবেন, তাতে কি আসে যায় মামা? এতবড় জটিল সমস্যাটা যেন একেবারে জল হয়ে গেল বিজয়া। মনে মনে বললুম, ভগবান! তোমার ত কিছুই অগোচর নেই! এদের বিবাহ আমি যে—কোন মতেই দিই না, তোমার কাছে যে অপরাধী হব না, সে নিশ্চয় জানি। তবুও বললুম, কিন্তু একটা কথা আছে যে নলিনী! বিজয়া যে তাঁদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাঁরা যে তারই উপর নির্ভর করে নিশ্চিন্ত হয়ে আছেন। এ সত্য ভাঙ্গবে কি করে?

নলিনী বললে, মামা তুমি ত জান, বিজয়ার অন্তর্যামী কখনো সায় দেননি। তাঁর চেয়ে কি বিজয়ার বলাটাই বড় হল? তার হৃদয়ের সত্যকে লঙ্ঘন করে কি তার মুখের কথাটাকেই বড় করে তুলতে হবে?

আমি আশ্চর্য হয়ে বললুম, তুই এ-সব শিখলি কোথায় মা?

নলিনী বললে, আমি নরেনবাবুর কাছেই শিখেছি। তিনি বার বার বললেন, সত্যের স্থান বুকের মধ্যে, মুখের মধ্যে নয়। কেবল মুখ দিয়ে বার হয়েছে বলেই কোন জিনিস কখনো সত্য হয়ে উঠে না। তবুও তাকেই যারা সকলের অগ্রে, সকলের ঊর্ধ্বে স্থাপন করতে চায়, তারা সত্যকে ভালবাসে বলেই করে না, তারা সত্যভাষণের দম্ভকেই ভালবাসে বলে করে।

একটুখানি চুপ করিয়া বলিলেন, তুমি নরেনকে জান না মা, সে যে তোমাকে কত ভালবাসে, তাও হয়ত ঠিক জান না। সে এমন ছেলে যে, অসত্যের বোঝা তোমার মাথায় তুলে দিয়ে তোমাকে গ্রহণ করতে কিছুতেই রাজী হত না। একবার আগাগোড়া তার কাজগুলো মনে করে দেখ দিকি বিজয়া!

বিজয়া কিছুই কহিল না। নিঃশব্দে নতমুখে কাঠের মত দাঁড়াইয়া রহিল।

নলিনী ভিতরে কাজে ব্যস্ত ছিল। খবর পাইয়া ছুটিয়া আসিয়া বিজয়াকে জড়াইয়া ধরিল। কানে কানে কহিল, তোমাকে সাজাবার ভার আজ নরেনবাবু আমাকে দিয়েছেন। চল, বলিয়া তাহাকে একপ্রকার জোর করিয়া টানিয়া লইয়া গেল।