এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

প্রবন্ধ  :  নারীর মূল্য         
পরিচ্ছেদ: / 1
পৃষ্ঠা: / 47
এমনি করিয়া মহাভাগার পূজার উপকরণ সজ্জিত হইয়া উঠিতে লাগিল। কিন্তু একদিন যাহাকে বংশের হিতকামনায় ঘরের মধ্যে আহ্বান করিয়া আনিয়াছি, যাহার জন্য হয়ত যুদ্ধ করিয়াছি, ছলনা, মিথ্যা কথা, এমন কি চুরি পর্যন্ত করিয়াছি, এমন এতবড় উপকারী জীবটাকে এখন হত্যা করি কেন? কারণ আছে। প্রথম, পরলোকে সেবা করে কে, দ্বিতীয়, ভাগ্যদোষে যে স্ত্রী বিধবা হইয়া গেল, তাহার দ্বারা আর কি বিশেষ কাজ পাওয়া যাইবে? বরং, ভবিষ্যতে অশান্তি-উপদ্রবের সম্ভাবনা, অতএব, সময়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। এখানে যদি মনে রাখা যায়, নারী ব্যক্তি-বিশেষের নিকটে সম্বন্ধ-বিশেষেই দামী, অন্যথা নহে, তাহা হইলে অনেক কথা আপনিই পরিষ্কার হইয়া যাইবে। তবে, আর একটা সম্বন্ধের কথা উঠিয়া আপত্তি হইতে পারে, তাহা জননীর সম্বন্ধ। সে আলোচনা পরে হইবে।

যাঁহারা ইতিহাস পড়িয়াছেন, তাঁহারা জানেন বিধবা-বিবাহ জগতের কোন দেশে কোনদিন সমাদর পায় নাই। কম-বেশি ইহাকে সকলেই অশ্রদ্ধার চোখে দেখিয়া আসিয়াছে। এ অবস্থায় যে দেশে এ প্রথা একেবারেই নিষিদ্ধ সে দেশে পুড়াইয়া মারা যে বিশেষ হিতকর অনুষ্ঠান বলিয়াই বিবেচিত হইবে, তাহা আশ্চর্য নয়! অবশ্য এ কথা স্বীকার করিতে অনেকেরই লজ্জা হইবে, কিন্তু পতিহীনা নারীর এখানে যখন আর তত আবশ্যক নাই, তখন কোনমতে ও-পারে রওনা করাইয়া দিতে পারিলে স্বামী মহাশয়ের কাজে লাগিবার সম্ভাবনা, এই ইচ্ছাই যে এ প্রথার মূলে এ কথা অস্বীকার করা এক গায়ের জোর ভিন্ন আর কিছুতেই পারা যায় না। তা ছাড়া দেখা যায়, যে সমস্ত অসভ্য দেশে স্বামীর মৃত্যুর সহিত স্ত্রী বধ হইত, তাহাদের ঐ বিশ্বাস একান্ত দৃঢ়। তাহারা মনে করে, মৃতের আত্মা কাছাকাছি, ঝোপে-ঝাপে, গাছপালায় বসিয়া থাকে, সুতরাং সঙ্গিনীকে পাঠাইয়া দিলে উপকার হইবে। কিন্তু আমাদের সুসভ্য এই প্রাচীন দেশ, যেদেশে আত্মার স্বরূপ পর্যন্ত নির্ণীত হইয়া গিয়াছিল, ঈশ্বরের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ মাপিয়া শেষ করা হইয়াছিল, সে দেশের পণ্ডিতেরাও যে বিশ্বাস করিতেন, বধ করিয়া সঙ্গে পাঠান যায়, ইহাই আশ্চর্য! তবে এ যদি নারী-পূজার একটা বিশেষ পদ্ধতি হইয়া থাকে, ত সে আলাদা কথা। পুরুষ বুঝাইয়াছে সহমৃতা হওয়া সতীর পরম ধর্ম। মনুও বলিয়াছেন, এক পতি-সেবা ব্যতীত স্ত্রীলোকের আর কোন কাজ নাই। সে ইহকালে পুরুষের সেবা করিয়াছে, পরকালে গিয়াও করিবে। কিন্তু কখন্‌ করিবে, কতদিন পরে করিবে, এত ঝঞ্ঝাটে সে যাইতে চাহে নাই। তাহার বিলম্ব সহে না, তাই মরণ-সম্বন্ধে একটু সত্বর ও সতর্ক হওয়াই সে আবশ্যক মনে করিয়াছে। শাস্ত্র বলিয়াছেন, এক মাতৃত্বের কারণেই সে পুজার্হা, সুতরাং সে সুযোগ না থাকিলে তাহাকে লইয়া আর কি হইবে? তার পর ছোট-বড় কীর্তিস্তম্ভ উঠিয়াছে, গল্পের মধ্যে, দৃষ্টান্তের মধ্যে তখন সে স্ত্রীর দাম চড়িয়া গিয়াছে।