এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

পুস্তকাকারে অপ্রকাশিত রচনা  :  আগামীকাল         
পরিচ্ছেদ: / 3
পৃষ্ঠা: / 20
সে চিন্তায় লাভ? বিপদকে সে ভয় করে নাকি? তোর হলে চিন্তা করতাম। এই বলে এককড়ি একটু হেসে গুড়গুড়ির নলটা তুলে নিয়ে মুখে দিলে।

জলধি গম্ভীর মুখে উঠে দাঁড়িয়ে বললে, চললাম।

এককড়ি তামাকের ধুঁয়ার সঙ্গে আবার একটু হেসে বললে, কাল একবার আসিস। বুঝেচি, তোর আসল মতলব ছিল মণিকে ধমকানো,—জবাব দেওয়া নয়। যখন সেখানে যাচ্ছিস, তখন কথা উঠলে বলিস, জবাব তাকে আমিই দিয়েছি—তুই নয়, তুই বরঞ্চ তাকে রাখতেই চেয়েছিলি।

জলধি ভেবে পেলে না কথাটা তামাশা, না আর কিছু। অন্তরে মর্মান্তিক জ্বলে গেল, কিন্তু প্রকাশ না করে শুধু বললে, অত্যন্ত বাহুল্য কথা এককড়িদা। জবাব দেবার সত্যিকার মালিক যে তুমি, আমি নয়, এ কথা সে জানে। এই বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল, হঠাৎ দোরের কাছে থমকে দাঁড়িয়ে বললে, তবু সেই বাহুল্য কথাটাই বলার জন্যে একবার তার বাসায় যেতে হবে। আমার সম্বন্ধে মণি আর যাই মনে করুক, এ না মনে করে এক অভাগা আর এক অভাগার অন্ন মেরে দিলে। এই বলেই দ্রুতবেগে চলে গেল।

চতুর্থ পরিচ্ছেদ

ওদিকে মণিমালার ঘর থেকে এইমাত্র গুটি-চারেক মেয়ে নেবে গেল। তারা মণির বন্ধু। এসেছিল নারী-সমিতির পক্ষ থেকে। আগামী সপ্তাহে বসবে অধিবেশন, ডেলিগেট আসচেন নানা জেলা থেকে প্রায় শতাধিক, প্রস্তাব এই যে, উক্ত সভায় মণিমালাকে মুভ করতে হবে একটা omnibus resolution—তাতে বিবাহ বিচ্ছেদ থেকে চাকরিতে নর-নারীর সমান মাইনে পর্যন্ত নানা দাবীই বেশ কড়া করে থাকবে। মণি কিন্তু রাজী হলো না, হেসে বললে, যে চেহারা ভাই আমার—কেউ বিয়ে করলেই বেঁচে যাই, তা আবার বিবাহ-বিচ্ছেদ। এনা হেনা দুই বোন, তাদের ঝাঁজই সবচেয়ে প্রখর, রেগে বললে, বিয়ে কি আমাদেরই হয়েছে নাকি? আমরা নিজেদের কথা ত ভাবছি না, ভাবছি সমস্ত নারীজাতির হয়ে। তুমি বলতে পারো চমৎকার, ডিবেট করতে তোমার জোড়া নেই, তাই সুকল্যাণী মিটারের ইচ্ছে এ resolution তোমাকে দিয়েই প্রস্তাবিত করা। আমরা ফিরে আসছি তাঁর চিঠি নিয়ে, দেখি কি করে তখন অস্বীকার করো।

মণি বললে, আমাকে মাপ করো ভাই।

এনা বললে, জানো এতে তাঁকে অপমান করা হবে।

অপমান ত করচি নে ভাই, আমি হাতজোড় করছি।

আচ্ছা সে দেখা যাবে। আসছি চিঠি নিয়ে। হয়ত বা তিনি নিজেই এসে হাজির হবেন। এই বলে মেয়েরা চলে গেল। তাদের কাপড়ের এসেন্সের গন্ধে তখনও ঘরের বাতাস ভারী, উত্তেজিত কণ্ঠের ঝাঁজালো তর্ক তখনও চারটে দেওয়ালের গায়ে মাথা ঠুকে বেড়াচ্ছে। মণি ডাকলে, রমেন কি ঘুমুচ্ছো?

ঘরের অপর প্রান্তে একটি কেম্বিসের ইজিচেয়ারে রমেন চোখ বুজে শুয়েছিল, সাড়া দিয়ে বললে, না, আমার ট্রেনের-শব্দেই ঘুম হয় না, এ ত চার-চারটে এরোপ্লেনের সার্কাস চলছিল।