এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

পুস্তকাকারে অপ্রকাশিত রচনা  :  আগামীকাল         
পরিচ্ছেদ: / 3
পৃষ্ঠা: / 20
জলধি আর তর্ক করলে না। ক্ষণকাল চুপ করে থেকে বললে, আসলে আপনার প্রকৃতিটা বড় নির্মম, এককড়িদা। আমি নিজে যদি কখনো বিদায় নিই, কেবল এই জন্যেই নেবো। ইতিমধ্যে আপনার গণেশের কলম চলতে থাক্‌, আমি উঠলাম। এই বলে সে ক্ষুদ্র একটা নমস্কার করে ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল, এককড়ি ডেকে বললে, কোথায় যাচ্ছ জলধি?

যাবার মুখ নেই, তবু যেতে হবে। পুরুষত্ব বলুন, মনুষ্যত্ব বলুন, দেশের পায়ে আজো একেবারে জলাঞ্জলি দিতে পারিনি। মায়া-মমতা আজও যেন বুকের মধ্যে কোথায় বেঁধে, এককড়িদা।

অর্থাৎ মণির বাসায় গিয়ে তাকে একটু সান্ত্বনা দিতে চাও?

সান্ত্বনা দেবার দরকার হবে না, এটুকু অন্ততঃ তারে জানি। সে যাই হোক, আমি হলে কিন্তু এমন সরাসরি জবাব দিতাম না,—এবারের মত শুধু একটা warning দিয়েই পালা শেষ করতাম।

শুনে এককড়ি প্রথমটা গম্ভীর হলো, তার পরে হঠাৎ হেসে ফেলে বললে, দূর গাধা! তোর পালা আরম্ভ করার বুদ্ধিটাও যেমন অসাধারণ, পালা শেষ করার ফন্দিটাও তেমনি চমৎকার। এই warning দেবার মতলব কে যোগালেন? এই বুঝি তারে চিনেচিস্‌ এতদিনে একসঙ্গে কাজ করে?

জলধি এ তিরস্কারের উত্তর খুঁজে না পেয়ে হতবুদ্ধির মতো চেয়ে রইলো।

এককড়ি বলতে লাগলো, তার আচরণ আমরা অনুমোদন করিনে, এই ধরনের স্বেচ্ছাচার আমাদের ভাল লাগে না। অতএব বিদায় দেওয়া হলো এ কথাটা মণি অনায়াসে বুঝবে, কিন্তু তোর চোখ রাঙিয়ে ধমক দেওয়া বুঝবে না। বরঞ্চ, এইজন্যে সে কৃতজ্ঞ থাকবে যে, আমরা তার সংস্রব ত্যাগ করেচি, কিন্তু অসম্মান করিনি। বলিনি, প্রভুর রুচির সঙ্গে ভৃত্যের রুচি মেলেনি বলে এবার শুধু তার কান মলে দেওয়া হলো, ভবিষ্যতে নাক কেটে দেওয়া হবে।

জলধি আস্তে আস্তে জিজ্ঞাসা করলে, তা হলে জবাবটা একেবারে settled? এর নড়চড় হতে পারবে না?

না। কল্যাণ-সঙ্ঘের নামটা তার জন্যে পালটাতে পারবো না।

জবাব শুনে জলধি বহুক্ষণ পর্যন্ত নীরবে নতমুখে বসে রইলে; তার পরে মুখ তুলে অনুতপ্ত স্বরে ধীরে ধীরে বললে—এবারের মতো আমার অভিযোগটা আমি প্রত্যাহার করচি এককড়িদা। এবার তাকে আমি ক্ষমা করতে প্রস্তুত।

এককড়ি ঘাড় নেড়ে বললে, আমি প্রস্তুত নয় জলধি।

কিন্তু সত্যই সে কোন অপরাধ করেছে কি না তাও বিচার করবেন না?

সত্যিকার অপরাধ তুই কারে বলিস জলধি? যা ইঙ্গিত করেছিস তা-ই?—না সে দোষ সে কখনো করেনি, কখনো করবে না।

তবু বিদায় করে দেবেন?

হাঁ তবুও। আমাদের মধ্যে ওকে রাখতে পারবো না।

কতখানি বিপদের মধ্যে তাকে ঠেলে দিচ্ছেন একবার তাও চিন্তা করবেন না?