এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

অজ্ঞাত রচনা  :  বারোয়ারি উপন্যাস         
পরিচ্ছেদ: / 2
পৃষ্ঠা: / 9
কমলা এ কথার কোন উত্তর দিল না, দেবার ছিলই বা কি! কিন্তু গাড়ি কতকটা পথ চলে গেলে সে কেবলমাত্র একটিবার জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখতে পেলে হরেন এখনও সোজা তাদের দিকেই চেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

পথের মধ্যে অরুণ অনেক কথাই বকে যেতে লাগল। তার নিজের প্রতি ভারী একটা ভরসা ছিল। সেই যে দুর্গামণি তাকে বলেছিলেন, তিনি গুজবটা বিশ্বাস করেন নি, এবং সেও তাকে জানিয়ে এসেছে, কলকাতায় দিদি তার কাছেই আছেন, এতেই তার সাহস ছিল, দুর্ঘটনাটাকে সে অনেকখানিই সহজ করে দিয়েছে। এই ভাবের সান্ত্বনাই সে থেকে থেকে দিদিকে দিয়ে যেতে লাগলো, কিন্তু দিদি যেমন নিঃশব্দে ছিল, তেমনি নীরবেই বসে রইল। হরেনের সেই কথাটা সে ভোলেনি যে অরুণের এই কথাটা সহজে কেউ বিশ্বাস করবে না! কিন্তু এজন্য মনের মধ্যে তার বিশেষ কোন চাঞ্চল্যও ছিল না। বস্তুতঃ যা সত্য নয়, সে যদি লোকে অবিশ্বাসই করে ত দোষ দেবার কাকে কি আছে! কিন্তু যথার্থ যে-চিন্তা তার মনের মধ্যে ধীরে ধীরে জাঁতার মত চেপে বসছিল, সে তার শাশুড়ীর কথা। তিনি বলেছিলেন বটে, তাঁর বধূর কলঙ্ক তিনি বিশ্বাস করেন না, কিন্তু এই বিশ্বাস কি তাঁর শেষ পর্যন্ত অটুট থাকবে? কোথাও কি কোন অন্তরায় কোন বিঘ্ন ঘটবে না? সে জানতো, ঘটবে। পল্লীগ্রামে মানুষ হয়েই সে এত বড় হয়েছে, তাদের সে চেনে,—কিন্তু এ সংকল্পও তার মনে মনে একান্ত দৃঢ় ছিল, অনেক ভুল, অনেক ভ্রান্তিই হয়ে গেছে, কিন্তু আর সে তার নিজের এবং স্বামীর মধ্যে তৃতীয় মধ্যস্থ মানবে না। এ সম্বন্ধ যদি ভেঙ্গেও যায় ত যাক্‌, কিন্তু জগদীশ্বর ভিন্ন দুজনের মাঝখানে অন্য বিচারক সে কখনো স্বীকার করবে না।

বেলতলী স্টেশনে যথাসময়েই ট্রেন এসে পৌঁছল, কিন্তু ঘোড়ার গাড়ি যোগাড় করা সহজ হোলো না। অনেক চেষ্টায় অনেক দুঃখে অরুণ যখন একটা সংগ্রহ করে নিয়ে এল, তখন বেলা হয়েছে, এবং পল্লীপথের পাকা দুই ক্রোশ উত্তীর্ণ হয়ে অশ্বযান যখন জগদীশপুরের সতীশ বাগচীর বাটীর সুমুখে উপস্থিত হল তখন বেলা বারোটা।

দুর্গামণি গোটা-তিনেক ময়লা ওয়াড়হীন তুলো-বার-করা বালিশ জড়ো করে ঠেস দিয়ে বসে এক বাটি গরম দুধ পান করছিলেন, এবং অদূরে মেঝেয় বসে পাড়ার একটি বিধবা মেয়ে কুলোয় খৈয়ের ধান বাচছিল। দুর্গামণির জ্বর তখনও একটু ছিল বটে, কিন্তু টাইফয়েডের কোন লক্ষণই নয়। তিনি অরুণকে দেখে খুশী হয়ে বললেন, কে অরুণ এসেছো বাবা? এসো বোসো। দোরগোড়ায় ও কে গা?