এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

অজ্ঞাত রচনা  :  বারোয়ারি উপন্যাস         
পরিচ্ছেদ: / 2
পৃষ্ঠা: / 9
দিদি এসেছেন—

দিদি? কে বউমা?

পরক্ষণেই কমলা ঘরে ঢুকে গলায় আঁচল দিয়ে ভূমিতলে গড় হয়ে প্রণাম করতেই দুর্গামণি শশব্যস্ত হয়ে উঠ্‌লেন। দুধের বাটিটা মুখ থেকে নামিয়ে তাড়াতাড়ি বলে উঠলেন—থাক থাক, বউমা, আর পায়ের ধূলো নিতে হবে না। সারাদিন পরে দুধ ফোঁটাটুকু মুখে তুলেচি, এটুকু আর ছুঁয়ে দিয়ো না।

যে মেয়েটি খৈ বাচছিল সে স্পর্শ বাঁচিয়ে কুলোসমেত দু'হাত সামনে এগিয়ে গেল। কমলা নির্বাক স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। কিন্তু অরুণ যেন একেবারে অগ্নিকাণ্ডের ন্যায় জ্বলে উঠে বলে ফেল্‌লে—মিথ্যেবাদী! কেন তবে কাল তুমি বললে, ও-সব গুজবে তুমি বিশ্বাস করো না! কেন বললে—

শোন কথা! কবে আবার বললুম বিশ্বেস করিনে? আর জ্বরের ধমকে যদি কিছু বলেই থাকি ত সে কি আমার ধর্তব্যি, বাছা!

অরুণ কাঁদ-কাঁদ হয়ে বললে, তা হলে ত আমি কখখনো দিদিকে আনতুম না। দুর্গামণি দুধের বাটিটি সরিয়ে একটু নিরাপদ স্থানে রেখে বললেন, তা বেশ ত বাছা, অমন মারমুখী হোচ্চো কেন? সাণ্ডেল মশাই আসুন, রায় বট্‌ঠাকুরকে খবর দি,—ততক্ষণ ঘরে সবই আছে, পটলের মা বের কোরে দিক্‌—দোরের উনুনটায় বোক্‌নোয় করে ডাল-চাল দুটো ফুটিয়ে তোমাকেও দুটো দিক্‌, নিজেও দুটো খাক।

অরুণ চতুর্গুণ জ্বলে উঠে বললে, কি! আমরা তোমার বাড়ি ভিক্ষে নিতে এসেচি । এত বড় কথা বল তুমি! আচ্ছা, টের পাবে! এই বোলে সে কমলার হাতখানা চেপে ধরে বললে, চল দিদি, আমরা যাই,—এখনো আমাদের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে—এক মিনিটও এর মুখ দেখতে চাইনে।

কমলা ধীরে ধীরে নিজের হাতখানি মুক্ত করে নিয়ে বললে, চল, যাচ্চি ভাই। তারপরে মাথার আঁচলটা সরিয়ে দিয়ে শাশুড়ীর মুখের পানে চেয়ে শান্ত সহজ কণ্ঠে বললে, মা আমি চললুম, কিন্তু আমিও এ বাড়ির বউ, তোমারি মত এও আমার শ্বশুরের ভিটে। কিন্তু এমন অপরাধ আজও করিনি যাতে এ বাড়িতে আমাকে দোরের উনুনে রেঁধে খেতে হয়।

শাশুড়ী বললেন—তা কি জানি বাছা!

কমলার মলিন চোখের দৃষ্টি হঠাৎ শিখার মত দীপ্ত হয়ে উঠল—বোধ হয় কি যেন সে বলতেই চাইলে, কিন্তু সে অবসর আর পেলে না। অরুণ বজ্রমুষ্টিতে হাত ধরে জোর করে তাকে নিয়ে বাইরে চলে গেল।