এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

অজ্ঞাত রচনা  :  'বামুনের মেয়ে'র নাট্যরুপ         
পরিচ্ছেদ: / 1
পৃষ্ঠা: / 4
জগদ্ধাত্রী এতক্ষণ অদূরে দাঁড়াইয়া ছিলেন। বিরক্তির স্বরে কহিলেন—ঝিকে ডেকে জল দিতে বল নিরু। হাত থেকে ওটা নিলি—মন ভুলে আবার যেন তুই খাবার জলের কলসি-টলসি ছুঁয়ে ফেলিস নে বাছা! বলিয়া ঘরে চলিয়া গেলেন। উভয়েই উভয়ের প্রতি ক্ষণকাল হতবুদ্ধির মত চাহিয়া থাকিয়া, অরুণ তাড়াতাড়ি বলিয়া উঠিল, থাক থাক আর জলে কাজ নেই,—আমি বাড়ি গিয়েই খাবো অখন।

নিরুপমা উঠিয়া গিয়া মুখের পানটা একধারে ফেলিয়া দিয়া কাঁদ-কাঁদ হইয়া বলিল, কেন তুমি আমাকে কষ্ট দিতে এ বাড়িতে কোন কিছু চাও? একদিন মা তোমাকে মাটির ভাঁড়ে জল খেতে দিয়েছিলেন, তোমার মনে নেই?

অরুণ হাসিবার চেষ্টা করিয়া বলিল, না, আমার মনে ছিল না। কিন্তু হলোই বা মাটির ভাঁড় তাতে কি তেষ্টা ভাঙ্গে না?

জানিনে তোমার ভাঙ্গে কি না। কিন্তু আমার যে—বলিতে বলিতেই সে অকস্মাৎ ঘাড় ফিরাইয়া আর এক দিকে চাহিয়া চুপ করিল।

অরুণ হাসিল। কহিল, কিন্তু তুমিও ত মুখের পান ফেলে দিলে নিরু। শুধু খুড়ীমার দোষ দিলে হবে কেন? ওটা ত তিনি বলেন নি! একটা ছাগল কি একটা বেড়াল ছুঁয়ে ফেললে ত তুমি এ কাজ করতে না। আমার নিরাশ্রয় ব্রাহ্ম বোনটিকে আশ্রয় দিয়ে কি আমি তার চেয়েও ছোট হয়ে গেছি?

নিরুপমা অন্য দিকে চাহিয়া থাকিয়াই জবাব দিল—কিন্তু ছোট-বড় স্থির করবার ভার ত তোমরা আমাদের ওপর দাওনি। যে ঘৃণা করি বলে এখন নালিশ করচ, আমাদের ধর্ম, আমাদের সমাজ মন্দ বলে ঘৃণায় তাঁরাই চলে গিয়েছিলেন, আমরা যাইনি। আজ এ অভিযোগ ত তোমাদের মুখে সাজে না অরুণদা!

অরুণ ক্ষণকাল চুপ করিয়া থাকিয়া কহিল, তাহলে আমাদের ঘৃণা করবার তোমাদের অধিকার আছে বল?

যদি থাকে ত সে তোমাদেরই দান।

তাহলে খুড়ীমার আচরণে রাগ করবার অধিকার ত তোমারও নেই।

নিরুপমা অকস্মাৎ তাহার আরক্ত সজল চোখ-দুটি অরুণের মুখের প্রতি তুলিয়া বলিল, আমার মায়ের ওপর আমার কি অধিকার সে আমি বুঝবো। কিন্তু তুমি কি ক্ষিদে-তেষ্টা চেপে এই দুপুরবেলা আমার সঙ্গে ঝগড়া করতে দাঁড়ালে নাকি? বাড়ি যাও।

যাচ্চি। হাঁ নিরু, আমাকে ছুঁতে কি তোমার ঘৃণা হয়?

হাঁ হয়। তুমি বাড়ি যাও না।

যাচ্চি।