এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

পুস্তকাকারে অপ্রকাশিত রচনা  :  আগামীকাল         
পরিচ্ছেদ: / 3
পৃষ্ঠা: / 20
প্রার্থনার রসটা এককড়ি বুঝলো না, সবিস্ময়ে জিজ্ঞাসা করলে, কার গঙ্গাযাত্রা করতে চাও, আমাদের সঙ্ঘের?

জলধি বললে, ঠিক তাই। মরবেই ত, শুধু নিশ্বাসটুকু বেরোবার পূর্বে একটু সমারোহে ঘাটে নিয়ে যাওয়া।

এককড়ি স্তব্ধ হয়ে চেয়ে রইলো।

জলধি বলতে লাগলো, অফিস-ঘরে খাতাপত্রগুলো আছে। সংখ্যায় নিতান্ত কম নয়। তা হোক, ওগুলো শুধু মুমূর্ষুর গায়ের নোংরা কাপড়-চোপড়। দাম কানাকড়িও নয়, বরঞ্চ রোগের বীজাণু ছড়াবার আশঙ্কা আছে। চলুন, সদস্যবৃন্দ সমাগত হবার পূর্বে দেশলাই জ্বালিয়ে সৎকার করে ফেলা যাক।

এককড়ি ধীরে ধীরে জিজ্ঞাসা করলে, আজ তোমার হলো কি জলধি?

জলধি বললে, কি হয়েছে সে বিবরণ আপনাকে সবিস্তারে দেবার নয়। মণিমালা উপস্থিত থাকলে সে হয়ত আপনাকে বুঝিয়ে দিতে পারতো।

এককড়ি আবার কিছুক্ষণ চুপ করে চেয়ে রইলো, বোধ হয় মনে মনে কারণ বোঝবার চেষ্টা করলে, কিন্তু কিছুই স্পষ্ট হলো না। প্রশ্ন করলে, তোমার দ্বিতীয় অনুরোধ?

জলধি বললে, এটা আরও বেশী দরকারি দাদা। আপনার মামা মস্ত লোক, তাঁকে ধরে করপোরেশনে হোক, মিউনিসিপালিটিতে হোক, জেলাবোর্ডে হোক, ইনসিওর কোম্পানিতে হোক,—অর্থাৎ আপনাদের স্বরাজ-পাণ্ডারা যেখানে বেশ একটু আসনপিঁড়ি হয়ে বসতে পেরেছেন, আমার চাকরি একটা করে দিন। যেন দু’মুঠো খেতে পরতে পাই।

এককড়ি ক্ষুব্ধ মুখে, কাতর স্বরে বললে, দু’মুঠো খেতে পরতে কি পাও না জলধি?

পাই বৈ কি দাদা, নইলে বেঁচে আছি কি করে? দেশের সেবা করি, একেবারে নিঃস্বার্থ। গোলামি করিনে বলে লোক ঠকিয়ে ইজ্জত বজায় করি—ডান-হাতটা ত রেখেচি দিনরাত বক্তার ঘুঁষিতে পাকিয়ে। তবু অলক্ষ্যে অগোচরে বাঁ-হাতের তেলোর পরে আপনার ছিটেফোঁটা মুষ্টিভিক্ষে যা এসে পড়ে তাতেই শোধ করি মেসের দেনা, খদ্দরের বিল। কুকুর-বিড়ালে যেভাবে বাঁচে প্রায় তেমনি। আপনি বড়লোক, বিশ-পঁচিশ-পঞ্চাশ আপনার হিসেবের মধ্যেই নয়। কিন্তু আর নয় দাদা, এর থেকে ছুটি দিন।

এককড়ি চুপ করে রইলো, কথা কইলে না। দেয়ালের ঘড়িতে পাঁচটা বাজলো। যে চাকরটা তামাক বদলে দিতে ঢুকেছিল তাকে বললে, গোপাল, নীচে থেকে মণিদিদিকে ডেকে দিয়ে যা ত। জলধি, পরের কাছে লজ্জাই যদি বোধ করো—

না না দাদা, পর কোথায়? যে-সব মহাত্মাদের মাঝে ঘোরাফেরা করি তাঁরা সবাই অন্তরঙ্গ, সবাই আত্মীয়। তাঁদের অজানা কিছুই নেই। বছর-দশেক স্বদেশসেবা-ব্রতে লেগে আছি, লজ্জা থাকলে বাঁচবো কেন?