এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

পুস্তকাকারে অপ্রকাশিত রচনা  :  আগামীকাল         
পরিচ্ছেদ: / 3
পৃষ্ঠা: / 20
চাকরটা গুড়গুড়ির মাথায় কলকে রেখে নীচে যাচ্ছিলো, জলধি তাকে বারণ করে বললে, গোপাল, তোর কাজে যা। একটু হেসে বললে, মণিমালা আসেনি এককড়িদা, মিছে সিঁড়ি ভাঙিয়ে ওকে লাভ কি?

আসেনি? এমনধারা ত কখনো হয় না।

হয় না বলেই হতে নেই দাদা? আজ তার দেহটা একটু বে-এক্তার—আমিই আসতে বারণ করে দিয়েছি।

কিন্তু অধিবেশনের কাগজপত্র?

কাগজপত্র আজ থাক গে। এককড়ি চিন্তিত সুরে বললে, যাদের কখনো কিছু হয় না, তাদের একটা কিছু হলে সহজে সারতে চায় না। ভয় হয় পাছে ওকে ভোগায়।

জলধি চুপ করে রইলো। এককড়ি বলতে লাগলো, চমৎকার মেয়ে। যেমন বিদ্যেবুদ্ধি, তেমনি চরিত্রের নির্মলতা, সাহসও তেমনি,—ভয় কাকে বলে জানে না।

জলধি সায় দিয়ে বললে, সাহস আছে তা মানি।

আমাদের গোপাল ওর বাসা চেনে। সন্ধ্যের পরে তাকে পাঠাবো। যদি ডাক্তারের দরকার হয়, দত্তসাহেবকে ডেকে নিয়ে যাবে।

ডাক্তার-বদ্যির দরকার হবে না এককড়িদা, বরঞ্চ গোপালকে দিয়ে বলে পাঠাবেন আর বেশী অত্যাচার না করে।

কিন্তু অত্যাচার ত সে করে না, জলধি।

আপনি বড় সেকেলে দাদা। সব তাতেই পূর্বকালের দোহাই পাড়েন, পরিবর্তন মানতে চান না। সে যা হোক গে, মণিমালা এখন যা শুরু করেছেন সাধারণ মানুষে তাকে অত্যাচার না বলে পারে না। ওঁর বাসায় গিয়ে দেখলাম বিছানায় শুয়ে, আর সেই বন্ধুটি শিয়রে বসে দিচ্ছে মাথা টিপে।

এককড়ি বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলে, বন্ধু আবার কে? এ কথা ত কখনো শুনিনি!

আবার সে পূর্বকালের নজির! কিন্তু তে হি ন দিবসাগতাঃ—বন্ধু কিছুদিন হলো এসেছেন। কোথায় নাকি আগে আলাপ হয়েছিল। চোখ রাঙ্গা, গলা ভেঙ্গেছে; জিজ্ঞেস করলাম, ঠাণ্ডা লাগালে কি করে মণি? মণি লোকটিকে দেখিয়ে বললে, কাল রমেনের সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিলাম বজবজে। বাস ছেড়ে গাঁয়ের পথ ধরে দু’জনে হাঁটলাম অনেক দূর। গঙ্গার ধারে একটা পুরোনো বটগাছ, তার তলায় গিয়ে দু’জনে বসে পড়লাম। আকাশে চাঁদ উঠলো, পাতার ফাঁকে ফাঁকে নামালো জ্যোৎস্নার আলো, সুমুখে নদীর জলে দিলে স্বপ্ন মাখিয়ে—ভুলে গেলাম ওঠবার কথা। হঠাৎ খেয়াল যখন হলো তখন ঘড়িতে দেখি বারোটা বেজে গেছে। অত রাত্রি ফেরবার বাস পাওয়া যাবে কোথায়, কাজেই রাতটা কাটাতে হলো গাছতলায় দাঁড়িয়ে। জলের ধারে খোলা জায়গায় একটু ঠাণ্ডা লাগলো বটে, কিন্তু সময় কাটলো যে কি করে দু’জনের কেউ টেরই পেলাম না। কাব্যের চরম।