এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

পুস্তকাকারে অপ্রকাশিত রচনা  :  নারীর লেখা         
পরিচ্ছেদ: / 1
পৃষ্ঠা: / 12
যাহা হউক, আমি নজির দিব বলিয়াছি, কিন্তু সমালোচনা করিব বলি নাই। সমালোচনা করা পণ্ডশ্রম। আমি বলিব, তোমার রচনার মানে নাই; তুমি জবাব দিবে, ‘আছে’। আমি বলিব, এই জায়গাটায় বাড়াবাড়ি করিয়াছ; তুমি বলিবে, ‘একটুও না; এমন না করিলে লেখা ফুটিত না’। আমি বলিব, ‘এই স্থানটার আর একটু প্রকাশ করা উচিত ছিল’; তুমি বলিবে, ‘নিশ্চয় না; আর প্রকাশ করিতে গেলে আর্ট মাটি হইয়া যাইত।’ বাস্তবিক, এ-সব তর্কের মীমাংসা হয় না। একেই লেখা বলে এই বিবেচনার উপরেই লেখকের যথার্থ কৃতিত্ব নির্ভর করে। সমালোচনা করিয়া দোষ-গুণ দেখাইয়া নিন্দা বা সুখ্যাতি করা যায় বটে কিন্তু আর কোন কাজ হয় না।

যাহা হউক, যাহা বলিতে চাহিয়াছিলাম তাহাই বলি। উক্ত প্রবন্ধে শ্রীমতী ঘোষজায়া বলিতেছেন, “ভারতবর্ষ অকস্মাৎ আজ স্বপ্ন হইতে জাগিয়া দেখিতেছে, যে জনপদের পথ ধরিয়া সে চলিতেছিল তাহা প্রকৃত নয়, মায়া সৃষ্টি মাত্র, অকস্মাৎ আজ তাহা দিগন্তবিলীন বাণীর ভিতর কোথায় মিলিয়া গিয়াছে।” ভাষা বটে! জনপদের পথ দিগন্তবিলীন বাণীর মধ্যে মিশিয়া গেল! জিজ্ঞাসা করি, রবিবাবু কোথাও কি এমনি করিয়া ‘বাণীর’ শ্রাদ্ধ করিয়াছেন? কিছুদিন পূর্বে লেখিকা ‘বিকাশ’ পত্রিকায় একটি দশ-বারো লাইনের কবিতায় ‘ব্যোম’ -এর সঙ্গে মিলাইবার জন্য ‘শশি সূর্য্য সোম’ লিখিয়াছিলেন। কবিতার কথা না হয় নাই ধরিলাম—কেন না, ‘ব্যোম’-এর ‘ম’ 'সোম’ ছাড়া মিলিতে চায় না। ‘শশী’টিকেও বাদ দিলে অক্ষর কম পড়ে। কিন্তু, জনপদের পথের ত অমন কোন ধনুকভাঙ্গা পণ ছিল না যে, ঐ ‘বাণী’টি না পাইলে আর মিলিত না! কবিকে অঙ্কুশ দেখাতে নিষেধ আছে তাহা মানি, কিন্তু তার্কিক যখন ঘর ছাড়িয়া লাঠি-হাতে মারিতে আসে তখনও যে একটুখানি আত্মরক্ষার চেষ্টা করিতে নাই এ কথা মানি না। সেটা ‘কাব্যি’! কিন্তু এটা যে দার্শনিক প্রবন্ধ! দার্শনিক প্রবন্ধ যখন এক শ’ টাকা দাবী করে, তখন সে ঐ ক্ষুদ্র তিনটি অক্ষরের ‘এক শ’ টাকাই চাই, তাহাকে ‘নব-নবতি রজত-মুদ্রা’ দিতে গেলে সে হাত পাতিয়া গ্রহণ করে না। কিন্তু আসল কথা এই যে, ‘বাণী’ রবিবাবু লেখেন, সুতরাং সেটা চাই-ই।

যদিও নাটক-নভেলে অত দোষ নাই, তথাপি অনুরূপা ‘পোষ্যপুত্রে’ লিখিলেন “পথে শব্দ মুখর হইয়া উঠিল” তখন ‘শব্দ’ শব্দায়মান হইয়া উঠিল বলা নিশ্চয়ই তাঁহার অভিপ্রায় ছিল না, কিন্তু ‘মুখর’ কথাটার ঠিক মানেটাও ত তাঁর জানা উচিত ছিল। জোর করিয়া ‘নির্লজ্জ’ অর্থ করার চেয়ে বরং বলা ভাল, “কি করিব ওটা যে আমার চাই-ই। ওটা মহতের ইত্যাদি।”