এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

অজ্ঞাত রচনা  :  ভালমন্দ         
পরিচ্ছেদ: / 1
পৃষ্ঠা: / 5
আমার মরণটাই তাহলে তুমি ইচ্ছে করো?
তুমি ত জানো ছোটবৌ সে ইচ্ছে করিনে। তবু স্ত্রী হয়ে যদি স্বামীর মর্যাদা এমন করে নষ্ট করে দাও যে মানুষের কাছে আর মুখ তুলে দাঁড়াতে না পারি, তাহলে—
কথাটা অবিনাশের মুখে বেধে গেল—শেষ হলো না। আলোকলতা বললেন, কি তাহলে—বলো?
উত্তরে একটা কঠোর কথা তাঁর মুখে এসেছিল, কিন্তু এবারেও বলা হোলো না। বাধা পড়লো কন্যার পক্ষ থেকে। এতক্ষণ সে নিঃশব্দেই সমস্ত শুনছিল, কিন্তু আর থাকতে পারলে না। বললে, না বাবা, এ সময়ে মার ভেবে দেখবার শক্তি নেই, তাঁকে কোন জবাব তুমি দিতে পারবে না।
মা মেয়ের স্পর্ধায় প্রথমটা হতবুদ্ধি হয়ে গেলেন, পরক্ষণে প্রচণ্ড ধমক দিয়ে বলে উঠলেন, শাশ্বতী, যা এখান থেকে, উঠে যা বলচি।
মেয়ে বললে, যদি উঠে যেতে হয়, বাবাকে সঙ্গে নিয়ে যাবো মা। তোমার কাছে ফেলে রেখে যাবো না।
কি বললি?
বললাম, তোমার কাছে ওঁকে একলা রেখে আমি যাবো না। কিছুতেই যাবো না। চলো বাবা, আমরা নদীর ধারে একটু বেড়িয়ে আসি গে। সন্ধ্যের পরে আমি নিজে তোমার খাবার তৈরী করে দেবো—এখন থাক গে খাওয়া। ওঠো বাবা, চলো। এই বলে সে তাঁর হাত ধরে একেবারে দাঁড় করিয়ে দিলে।
ওরা সত্যি চলে যায় দেখে আলোক নিজেকে একটু সামালে নিয়ে বললেন, একটু দাঁড়াও। সত্যিই কি একবারও ভাবোনি, চাকরি ছেড়ে দিলে তোমার বাড়ির এতগুলি প্রাণী খাবে কি!
অবিনাশ উত্তর দিতে গেলেন, কিন্তু এবারেও বাধা এলো মেয়ের দিক থেকে। সে বললে, খাবার জন্যে কি সত্যিই তোমার ভয় হয়েছে মা? কিন্তু হবার ত কথা নয়। চাকরি ছাড়লেও বাবা পেনশন পাবেন—সে তিন শ’ টাকার কম হবে না। পাশের বাড়ির সঞ্জীববাবু ষাট টাকা মাইনে পান, খেতে তাঁর ন-দশ জন। কতদিন দেখে এসেছি, খাওয়া তাঁদের আমাদের চেয়ে মন্দ নয়। তাঁদের চলে যাচ্চে, আর আমাদের তিন-চারজনের খাওয়া-পরা চলবে না!
মায়ের আর ধৈর্য রইলো না, একটা বিশ্রী কটূক্তি করে চেঁচিয়ে উঠলেন—যা দূর হ আমার সুমুখ থেকে। তোর নিজের সংসার হলে গিন্নীপনা করিস, কিন্তু আমার সংসারে কথা কইলে বাড়ি থেকে বার করে দেবো।
মেয়ে একটু হেসে বললে, বেশ ত মা, তাই দাও। বাবার হাত ধরে আমি চলে যাই, তুমি আর দাদা বাবার সমস্ত পেনশন নিয়ে যা ইচ্ছে করো, আমরা কেউ কথা কব না। আমি যে-কোন মেয়ে ইস্কুলে চাকরি করে আমার বুড়ো বাপকে খাওয়াতে পারবো।
মা আর কথা কইলেন না, দেখতে দেখতে তাঁর দু’ চোখ উপচে অশ্রুর ধারা গড়িয়ে পড়লো।