এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

অজ্ঞাত রচনা  :  ভালমন্দ         
পরিচ্ছেদ: / 1
পৃষ্ঠা: / 5
ভালমন্দ
অবিনাশ ঘোষাল আরও বছর-কয়েক চাকরি করতে পারতেন কিন্তু তা সম্ভব হোলো না। খবর এলো এবারেও তাঁকে ডিঙিয়ে কে একজন জুনিয়ার মুনসেফ সব-জজ হয়ে গেল। অন্যান্য বারের মতো এবারেও অবিনাশ নীরব হয়ে রইলেন, শুধু প্রভেদ রইলো এই যে, এবারে তিনি ডাক্তারের সার্টিফিকেট সমেত অবসর গ্রহণের আবেদন যথাস্থানে পৌঁছে দিলেন। আবেদন মঞ্জুর হবেই এ সম্বন্ধে তাঁর সন্দেহ ছিল না।
অবিনাশ সুজন, সুবিচারক, কাজের ক্ষিপ্রতায় সকলেই খুশী, ভদ্র আচরণের প্রশংসা সবাই করে, তবু এই দুর্গতি! এর পিছনে যে গোপন ইতিহাসটুকু আছে কম লোকেই তা জানে। সেটা বলি। তাঁর চাকরির গোড়ার দিকে, একবার এক ছোকরা ইংরেজ আই. সি. এস. জেলার জজ হয়ে আসেন অফিস ইন্‌সপেকসনে। সামান্য ব্যাপারে উভয়ের মধ্যে প্রথমে ঘটলো মতভেদ, পরে পরিণত হলো সেটা বিষম বিবাদে। ফিরে গিয়ে জজসাহেব নিরন্তর ব্যাপৃত রইলেন তাঁর কাজের ছিদ্রান্বেষণে, কিন্তু ছিদ্র পাওয়া সহজ ছিল না। জজসাহেবের মন তাতে কিছুমাত্র প্রসন্ন হলো না। রায় কেটেও দেখলেন হাইকোর্টে সেটা টেঁকে না—নিজেকেই অপ্রতিভ হতে হয় বেশী। বদলির সময় হয়েছিল, অবিনাশ চলে গেলেন অন্য জেলায়, কিন্তু দেখা করে গেলেন না। শ্রদ্ধা নিবেদনের প্রচলিত রীতিতে তাঁর দারুণ ত্রুটি ঘটলো। তারপরে কত বছর কেটে গেল, ব্যাপারটা অবিনাশ ভুলেছিলেন কিন্তু তিনি ভোলেন নি। তারই প্রমাণ এলো কিছুকাল পূর্বে। সেই ছোকরা জজ হয়ে এসেছেন এখন হাইকোর্টে, মুনসেফ প্রভৃতির দণ্ডমুণ্ডের মালিক হয়ে। অবিনাশ সিনিয়র লোক, কাজে সুনাম যথেষ্ট, উন্নতির পথ সম্পূর্ণ বাধাহীন, হঠাৎ দেখা গেল তাঁকে ডিঙিয়ে নীচের লোক হয়ে গেল সব-জজ। আবার এখানেই শেষ নয়, পরে পরে আরও তিনজন তাঁকে এমনি অতিক্রম করে উপরে উঠে গেল। যাঁরা জানেন না তাঁরা বলবেন, এ কি কখনো হয়? এ যে গবর্নমেন্টের চাকরি! তায় আবার এত বড় চাকরি! এ কি কাজীর আমল! কিন্তু অভিজ্ঞ যাঁরা তাঁরা বলবেন, হয়। এবং আরও বেশী কিছু হয়। সুতরাং, অবিনাশ মনে মনে বুঝলেন এর থেকে আর উদ্ধার নেই। আত্মসম্মান ও চাকরি দু’নৌকোয় পা দিয়ে পাড়ি দেওয়া যায় না—যে-কোন একটা বেছে নিতে হয়। সেইটেই এবার তিনি বেছে নিলেন।
বাসায় অবিনাশের ভার্যা আলোকলতা, আই. এ. ফেল-করা পুত্র হিমাংশু এবং কন্যা শাশ্বতী। ঝি-চাকরের সংখ্যা অফুরন্ত বললেও অতিশয়োক্তি হয় না—এত বেশি।