এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

অজ্ঞাত রচনা  :  দুটি অসমাপ্ত প্রবন্ধ         
পরিচ্ছেদ: / 2
পৃষ্ঠা: / 4
এ পথের সুবিধা-অসুবিধার কথাটা পূর্বেই বলিয়াছি, সুতরাং পুনরুল্লেখের প্রয়োজন নাই। কিন্তু, ফলাফলের কথাটা, অর্থাৎ সেই হীরক ও কাঁচখণ্ডর উপমাটা আর একবার স্মরণ করাইয়া দিয়া আসল কথাটা বলিয়া যাই।

কিন্তু, পূর্বাহ্ণেই একটা অবান্তর কথার আবশ্যক। আজকাল কোন একটা মাসিকপত্র খুলিলেই চোখে পড়ে ছাপার অক্ষরগুলোকে প্রধানতঃ দুই ভাগে ভাগ করে হইয়াছে। একভাগ ছন্দোবদ্ধ ব্যাপার, অর্থাৎ—পদ্য [যাঁহারা লেখেন তাঁহাদের ভাষায় ‘কবিতা’!] আর এক ভাগ—যাহাতে ছন্দের বালাই নাই—অর্থাৎ কিনা গদ্য! পদ্যের আলোচনা পরেই হইবে, আগে গদ্যের কথাটাই বলি। এই গদ্য দুই শ্রেণীর। মাসিকের সম্পাদকেরা বলেন, ‘কথাসাহিত্য’ ও ‘গবেষণামূলক প্রবন্ধ’! এই ‘কথাসাহিত্য’ আবার তিন প্রকার। প্রথম ছোটগল্প, দ্বিতীয় ‘ক্রমশঃ প্রকাশ্য উপন্যাস’ এবং তৃতীয়—যাহাকে সাহিত্যিকেরা কহেন—‘বিদেশের রত্নরাজি আহরণপূর্বক ভাষাজননীর শ্রীপদপঙ্কজে উপহার।’ উপহার! উপহারের দাম কষিতে গেলে লোকে আমাকে ইতর বলিবে, সুতরাং সেটা থাক। বাকী রহিল ছোটগল্প ও ক্রমশঃ প্রকাশ্য উপন্যাস। কিন্তু, ইহাই বিশেষ করিয়া নাকি এ প্রবন্ধের আলোচ্য বস্তু, তাই শেষে বলিব।

গবেষণামূলক প্রবন্ধ! ইহাতে সাধারণতঃ কি বুঝায়, এ প্রশ্ন আর কোন দেশের লোক করিয়া বসিলে নিশ্চয়ই বিপদে পড়িতাম এবং খুব সম্ভব জবাব দিতেও পারিতাম না, কিন্তু, বাঙ্গালা মুলুকের লোকের কাছে ভয় পাইবার কিছুমাত্র হেতু দেখি না। কারণ, এ মুলুকের গবেষণার ধারা আমি বিদিত আছি। ইহা মাত্র দুই প্রকার এবং গবেষণাকারীরা দুই দল হইয়া বিরাজ করেন। এ দলের একজন যাই ‘পদ্যপ্রচারিণী’তে গবেষণা করেন, ‘বিক্রমপুর পরগণার স্বর্ণভৃগু গ্রামের তিন্তিড়ী বৃক্ষমূলে যাহা পাওয়া গিয়াছে তাহাই ভোজরাজের তাম্রশাসন এবং ইহাই বাঙ্গালার ইতিহাসের প্রকৃত উপাদান।’ ‘গদ্যপ্রচারিণী’তে ও-দলের আর একজন তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ করেন—‘কখনই না। কারণ, এই প্রমাণ—ওই প্রমাণ—সেই প্রমাণের বলে স্পষ্ট জানা যাইতেছে, ওটা ভোজরাজের তাম্রশাসন হইতেই পারে না, ওইটাই তাম্ররাজের ভোজশাসন, যাহা নবম ধর্মপালদেব পঞ্চম বিক্রমপালদেবকে যুদ্ধে পরাস্ত করিয়া উজ্জয়িনীর তটে—উৎকীর্ণ করিয়া তাম্রলিপ্ত নগরে প্রোথিত করিয়াছিলেন, অতএব ইহাই বাঙ্গালার আসল ইতিহাস।’