দুটি অসমাপ্ত প্রবন্ধ
এক
দেশকে স্বাধীন করার প্রয়াস ‘ন্যারো ন্যাশনালিজম্’ ও নয়; ‘চাঊভিনিজম্’ ও নয়; বিশ্বমানবের হিতের জন্যই নিজের দেশ। যে দেশে জন্মেছি, মানুষ হয়েছি, সে দেশকে পরা-অধীনতার নিদারুণ অভিশাপ থেকে মুক্ত কোরব।
আদর্শের উল্লেখ যখন কোরব তখনই বৃহৎ আদর্শ, কল্যাণের আদর্শ গৌরবের আদর্শের কথাই স্মরণ কোরব। কেবল মহামানবতার আদর্শ গ্রহণ কর, তাকে ভারতের আদর্শ, এশিয়ার আদর্শ, হিন্দুর আদর্শ—এদিক দিয়ে কিছুতেই বিচার কোরব না। কারণ সেই ত ক্ষুদ্র মনের সঙ্কীর্ণ হীন আদর্শ; কোনমতেই সর্বজনীন মুক্ত আদর্শ নয়।
ত্যাগ কিসের? ভোগ করবে কে? কিসের জন্য জীবনের সর্বস্ব পরিত্যাগব্রতী হব? যারা বৃহত্তর স্বার্থের জন্য সামান্য বিশিষ্ট স্বার্থ ত্যাগ করতে পারবে না—শুধু তাদের জন্য? এ যেমন আত্ম-বিড়ম্বিত কৃপণের ধন সঞ্চয়ের মত, আমি না খেয়ে না পরে না দিয়ে খেটে খেটে মরি, আমার নন্দদুলাল ছেলেটা যেন সমস্ত নিষ্ফল জীবনটা নির্বিঘ্নে বেঁচে থাকতে পারে—এরই জন্য?
হে ভারত, তুমি কি শিখায়েছ না, ধর্মযুদ্ধে পদে পদে ক্ষমিতে অরিরে! তাই ভারতের আজ এত বড় দুর্দশা। রবীন্দ্রনাথের চেয়ে বড় ঈশ্বর-বিশ্বাসী জগতে কেউ আছেন বলে আমার মনে হয় না। এই পরম ভাগবত কবির সহস্র পলিটিক্যাল যুক্তি-তর্ক ভগবানের রুদ্ধদ্বারে এসে আছাড় খেয়ে পড়ে। তাঁর একান্ত বিশ্বাস বিধাতার কল্যাণহস্তই সব কিছু করে চলেছে, কিন্তু তাঁর ইচ্ছা কি তা আমরা জানিনে, তাঁর ইচ্ছার দোহাই পলিটিক্স-এ আসা কোন কারণেই আমার ভালো মনে হয় না।
প্রাচীনকালের দর্শনের বড় বড় যুক্তি-তর্ক যেমন বেদের বাণীর দরজায় এসে নিজেদের পথ হারিয়ে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হোতো।
বড় বড় ঈশ্বর-বিশ্বাসী ভক্তের দলই এ যাবৎ দেশের পলিটিকস্ নিয়ে নাড়াচাড়া করচে। যাঁদের হওয়া উচিত ছিল সন্ন্যাসী, তাঁরা হলেন পলিটিশিয়ান। তাই ভারত পলিটিক্সে এত বড় দুর্গত।