এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

উপন্যাস  :  অরক্ষণীয়া         
পরিচ্ছেদ: / 10
পৃষ্ঠা: / 54
অরক্ষণীয়া

এক

মেজমাসিমা, মা মহাপ্রসাদ পাঠিয়ে দিলেন—ধরো।

কে রে, অতুল? আয় বাবা আয়, বলিয়া দুর্গামণি রান্নাঘর হইতে বাহির হইলেন। অতুল প্রণাম করিয়া পায়ের ধূলা গ্রহণ করিল।

নীরোগ হও বাবা, দীর্ঘজীবী হও। ওরে ও জ্ঞানদা, তোর অতুলদাদা ফিরে এসেছেন যে রে! একখানা আসন পেতে দিয়ে মহাপ্রসাদটা ঘরে তোল মা। কাল রাত্তিরে সাড়ে-নটা দশটার সময় সদররাস্তায় ঘোড়ার গাড়ির শব্দ শুনে ভাবলুম, কে এলো! তখন যদি জানতুম, দিদি এলেন—ছুটে গিয়ে পায়ের ধূলো নিতুম। এমন মানুষ কি আর জগতে হয়! তা' দিদি ভাল আছেন বাবা? এখন পুরী থেকে আসা হ'ল বুঝি? কি কচ্ছিস মা—তোর অতুলদা যে দাঁড়িয়ে রইলেন।

মায়ের আহ্বানে একটি বার-তের বছরের শ্যামবর্ণ মেয়ে হাতে একখানি আসন লইয়া ঘর হইতে বাহির হইল; এবং যতদূর পারা যায়, ঘাড় হেঁট করিয়া দাওয়ার উপর আসনখানি পাতিয়া দিয়া, অতুলের পায়ের কাছে আসিয়া প্রণাম করিল; কথাও কহিল না, মুখ তুলিয়াও চাহিল না। প্রণাম করিয়া উঠিয়া, মহাপ্রসাদের পাত্রখানি হাত হইতে লইয়া, ধীরে ধীরে ঘরে চলিয়া গেল। কিন্তু একটু ভালো করিয়া দেখিলেই দেখিতে পাওয়া যাইত, যাবার সময়ে মেয়েটির চোখমুখ দিয়া একটা চাপা হাসি যেন উছলিয়া পড়িতেছিল।

আবার শুধু মেয়েঢিই নয়। এদিকেও একটুখানি নজর করিলে চোখে পড়িতে পারিত, এই সুশ্রী ছেলেটিরও মুখের উপরে দীপ্তি খেলিয়া একটা অদৃশ্য তড়িৎপ্রবাহ মুহূর্তের মধ্যে মিলাইয় গেল।

অতুল আসনে বসিয়া তীর্থ-প্রবাসের গল্প বলিতে লাগিল। তাহার বাপ একজন সেকেলে সদরআলা ছিলেন। অনেক টাকাকড়ি এবং বিষয়-সম্পত্তি করিয়া পেনসন লইয়া ঘরে বসিয়াছিলেন; বছর-চারেক হইল, ইহলোক ত্যাগ করিয়া গিয়াছেন। বি. এ. একজামিন দিয়া অতুল মাস-দুই পূর্বে মাকে লইয়া তীর্থপর্যটনে বাহির হইয়াছিল। সম্প্রতি রামেশ্বর হইয়া, পুরী হইয়া কাল ঘরে ফিরিয়াছে।

গল্প শুনিয়া দুর্গামণি একটা নিশ্বাস ফেলিয়া বলিলেন, আর এমনি মহাপাতকী আমি যে, আর কিছু না হোক, একবার কাশী গিয়ে বাবা বিশ্বেশ্বরের চরণ দর্শন করে আসব, এ-জন্মে সে সাধটাও কখন পুরল না।

অতুল বলিল, কাশীই বল, আর যাই বল মেজমাসিমা, একবার সব ছেড়েছুড়ে জোর ক'রে বেরিয়ে পড়তে না পারলে আর হয় না। আমি অমন জোর ক'রে না নিয়ে গেলে, আমার মায়েরই কি যাওয়া হ'ত?