এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

অজ্ঞাত রচনা  :  কোরেল         
পরিচ্ছেদ: / 11
পৃষ্ঠা: / 29
এক দণ্ডে মেরির সমস্ত মুখের ভাব পরিবর্তন হইয়া গেল। কাতরতা, বিষাদ, নিরাশা, লজ্জা, অভিমান সে-মুখে আর কিছুই রহিল না। শুধু বিশ্বব্যাপী প্রবল স্নেহ ও দিগন্তবিস্তৃত বিপুল শঙ্কা! প্রথমে সে হাত দিয়া লিওর কপোল স্পর্শ করিয়া শরীরের উত্তাপ দেখিল,—ভাল বুঝিতে পারিল না। তাহার পর দুই হস্তে লিওর মুখ নিচু করিয়া নিজের কপোল তাহার কপোলে সংলগ্ন করিয়া উত্তাপের স্তর অনুভব করিল; তাহার পর বিনা বাক্যব্যয়ে হাত ধরিয়া টানিয়া লইয়া চলিল। দৃপ্ত চক্ষে অমানুষিক আভা।

লিও সভয়ে বলিল, ‘কোথা যাও?’

‘যেখানে ইচ্ছা; কোন কথা জিজ্ঞাসা করিও না।’

লিও ভাবিল, এ কি!

মেরি বরাবর তাহাকে টানিয়া লইয়া একেবারে উপরে উঠিল, তাহার পর আপনার শয়নকক্ষে প্রবেশ করিল। অট্টালিকার মধ্যে এই কক্ষটিই সর্বাপেক্ষা সুন্দর এবং সজ্জিত। এক পার্শ্বে একটা প্রকাণ্ড দুর্মূল্য পালঙ্ক সজ্জিত ছিল, মেরি তাহার উপর লিওকে টানিয়া লইয়া বসাইয়া দিল। বালিশগুলি একত্র করিয়া বলিল, ‘চুপ করিয়া এখানে শুইয়া থাক—।’

চক্ষু ও মুখের ভাব দেখিয়া লিও পূর্বেই কিছু ভীত হইয়াছিল, এবার নিতান্ত ভয়ের সহিত বলিল—‘আমাকে যে আজ যাইতে হইবে। সময় উত্তীর্ণ হইতেছে।’

মেরি সে কথা শুনিতে পাইল বলিয়া বোধ হয় না। আপনার মনে একটা বহুমূল্য উষ্ণ শাল আনিয়া তাহার বক্ষ পর্যন্ত ঢাকিয়া দিয়া বলিল—‘লিও, এ সময়ে আমার সহিত কলহ করিলে চলিবে না। তুমি মনে করিয়াছ, ঋণ পরিশোধ করিয়াছ? কিছুই কর নাই!—আজ নয়, ভাল হও, তাহার পর এ কথা বুঝাইয়া দিব। তোমার যখন শরীর অসুস্থ তখন ও শরীরে আমারই সর্বময় অধিকার, আবার যখন ভাল হইবে তখন যাহা ইচ্ছা করিও—’

লিও স্তম্ভিত হইয়া গেল। এ কি কথা! ক্লিষ্ট শরীর মন্ত্রমুগ্ধবৎ ঢলিয়া আসিতেছিল, অর্ধমুদ্রিত চক্ষে লিও জোর করিয়া কহিল, ‘ছাড়িয়া দাও—আমি লন্ডনে যাইব।’

মেরি তাহার মুখের উপর মুখ রাখিয়া বলিল, ‘লন্ডনের কথা ছাড়িয়া দাও,—আমাকে জিজ্ঞাসা না করিয়া শয্যার নীচে নামিলে, আমি এই ছাদ হইতে নীচে লাফাইয়া পড়িব। আমার মন এখন পাগলের মত হইয়া আছে,—অবাধ্য হইলেই প্রাণ বিসর্জন দিব।’

লিও ধীরে ধীরে বলিল, ‘তবে আর কি করিয়া যাইব।’ তাহার পর পার্শ্ব পরিবর্তন করিয়া ঘুমাইয়া পড়িল।