এ কথা তাহাকে শিখাইতে হইবে না। জগতের মাঝে এ সত্য আজ মেরি অপেক্ষা বোধ হয় কেহই অধিক বুঝে না।
তারপর পাঁচটা বাজিল, ঘাড়ির পানে চাহিয়া লিও বলিল, 'তবে যাই—আমার সময় হইয়াছে।'
চলিয়া যায় দেখিয়া রুদ্ধকণ্ঠে বহু ক্লেশে মেরি কহিল,—'একটি কথা বলিয়া যাও—'
লিও ফিরিয়া আসিয়া কহিল, 'কি কথা?'
'এত টাকা কোথায় পাইলে?'
লিও মৃদু হাসিল। 'এ কথা কেন জিজ্ঞাসা কর? আমার কোন্ কথা তুমি জান না?'
‘কি জানি? অমন গান গাহিতে জান তাহা কি কখন বলিয়াছিলে?’
লিও এবার যথার্থই হাসিয়া ফেলিল—‘কৈ, তুমি ত কখন জিজ্ঞাসা কর নাই? জিজ্ঞাসা করিলে কত গান শুনাইয়া দিতে পারিতাম, এতদিনে হয়ত তুমিও আমার মত শিখিতে পারিতে।’
মেরি কহিল, ‘সে কথা নয়, টাকা কোথায় পাইলে বল?’
‘কোথায় আর পাইব? পিতা যাহা রাখিয়া গিয়াছিলেন, তাঁহার কার্যে তাহাই ব্যয় করিলাম। বাড়ি, ঘর, ফুলবাগান, আমার একরাশি পুস্তক—যাহা কিছু ছিল প্রায় সমস্তই বিক্রয় করিয়া তাঁহার ঋণ পরিশোধ করিয়াছি।’
মেরি কঠিন দৃষ্টিতে মুখপানে চাহিয়া বলিল—‘বেচিয়াছ?’
‘সব।’
‘থাকিবে কোথায়? খাইবে কি?’
‘আপাততঃ লন্ডনে যাইতেছি—সেখানে কোন কার্য খুঁজিয়া লইব। আশা আছে সমস্ত দিন উপবাস করিতে হইবে না।’
‘লন্ডনে কোথায় থাকিবে?’
‘দিন কতক বোধ হয় হসপিটালে থাকিব, তাহার পর যাহা হয় করিব।’
‘সেখানে কেন?’
‘সেখানে কিছু দিন কাটাইতে হইবে বলিয়া অনুমান করিতেছি। আজ চার দিন হইতে জ্বর হইয়াছে, কিছুতেই সারিতেছে না,—সদ্য লন্ডনে গিয়া যে ভাল থাকব এ আশাও করি না, টাকাকড়িও সঙ্গে অধিক নাই,—সে অবস্থায় কোথায় আর যাইব বল?’
মেরি শিহরিয়া উঠিল। ‘অ্যাঁ—আজ চার দিনের জ্বর সারে নাই?’
‘কৈ আর সারিয়াছে।’