এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

নাটক  :  রমা         
পরিচ্ছেদ: / 4
পৃষ্ঠা: / 76
বিশ্বেশ্বরী। অপরাধ? অপরাধের কথা বলতে গেলে ত শেষ হবে না বাবা। তাতে কাজ নেই। কিন্তু আমার নিজের কথাটা তুই জেনে রাখ্‌। এখানে যদি মরি রমেশ, বেণী আমার মুখে আগুন দেবে। সে হলে ত মুক্তি পাব না বাবা। ইহকালটা ত জ্বলে-জ্বলেই গেল, পাছে পরকালটাও এমনি জ্বলে-পুড়ে মরি, আমি সেই ভয়েই পালাচ্চি রমেশ।

রমেশ। জ্যাঠাইমা, ছেলের অপরাধ যে তোমার বুকে এমন কোরে বেজেছিল সে ত কোনদিন জানতে দাওনি? কিন্তু সমস্ত ছেড়ে রমা কেন বিদায় নিতে চায়? তাকে তুমি কোথায় নিয়ে যাবে?

রমা। আমি আসচি জ্যাঠাইমা।

[প্রস্থান]

বিশ্বেশ্বরী। জিজ্ঞেসা করছিলি রমা কেন বিদায় নিতে চায়? কোথায় তাকে আমি নিয়ে যেতে চাই? সংসারে আর তার স্থান হোল না রমেশ, তাই তাকে এবার ভগবানের পায়ের নীচে নিয়ে যাব। সেখানে গিয়েও সে বাঁচে কিনা জানিনে, কিন্তু যদি বাঁচে, বাকি জীবনটা এই অতি-কঠিন প্রশ্নের মীমাংসা করতে বলব, কেন ভগবান তাকে এত রূপ, এত গুণ, এতবড় একটা মহাপ্রাণ দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন, আর কেনই বা বিনা দোষে দুঃখের বোঝা মাথায় দিয়ে আবার সংসারের বাইরে ফেলে দিলেন। এ কি তাঁরই অভিপ্রায়, না এ শুধু আমাদের সমাজের খেয়ালের খেলা! ওরে রমেশ, তার মত দুঃখিনী বুঝি আর পৃথিবীতে নেই।

[বলিতে বলিতে তাঁহার গলা ভাঙ্গিয়া পড়িল। রমেশ নীরবে তাঁহার মুখের দিকে চাহিয়া রহিল]

বিশ্বেশ্বরী। কিন্তু তোর ওপর আমার এই আদেশ রইল রমেশ, তাকে যেন তুই ভুল বুঝিস নে। যাবার সময় আমি কারও বিরুদ্ধে কোন নালিশ করে যেতে চাইনে, শুধু এই কথাটা আমার তুই ভুলেও কখনো অবিশ্বাস করিস নে যে, তার বড় মঙ্গলাকাঙ্ক্ষিনী তোর আর নেই।

রমেশ। কিন্তু জ্যাঠাইমা

বিশ্বেশ্বরী। এর মধ্যে কোন ‘কিন্তু’ নেই রমেশ। তুই যা শুনেচিস সব মিথ্যে, যা জেনেচিস সব ভুল, কিন্তু এ অভিযোগের এইখানেই যেন শেষ হয়। তোর কল্যাণের কাজ যেন বন্যার মত সমস্ত দ্বেষ-হিংসা ভাসিয়ে নিয়ে বয়ে যেতে পারে, তোর ওপর এই তার শেষ প্রার্থনা। এই জন্যেই সে মুখ বুজে সমস্ত সহ্য করেছে। প্রাণ দিতে বসেচে রমেশ, তবু কথা কয়নি।