রমা। ঠিক জানি। যিনি সব জানেন, এ সেই জ্যাঠাইমার কথা। এ কাজ তোমারি। আমার যতীনকে তুমি হাতে তুলে নিয়ে, আমার সকল অপরাধ ক্ষমা কোরে, আজ আশীর্বাদ কর যেন নিশ্চিন্ত হয়ে আমি যেতে পারি।
রমেশ। কিন্তু যাবার কথাই বা তুমি কেন ভাবচ রমা,—আমি বলচি তুমি আবার ভাল হয়ে যাবে।
রমা। ভাল হবার কথা ত ভাবচি নে রমেশদা, শুধু ভাবচি আমার যাবার কথা। কিন্তু আরও একটি অনুরোধ তোমাকে রাখতে হবে। আমার কথা নিয়ে বড়দার সঙ্গে তুমি কোনদিন বিবাদ করো না।
রমেশ। এ কথার মানে?
রমা। মানে যদি কখনো শুনতে পাও, সেদিন কেবল এই কথাটি মনে কোরো, আমি কেমন কোরে নিঃশব্দে সহ্য করে চলে গেছি—একটি কথারও প্রতিবাদ করিনি। একদিন যখন অসহ্য মনে হয়েছিল, সেদিন জ্যাঠাইমা এসে বলেছিলেন,—মা, মিথ্যেকে ঘাঁটাঘাঁটি করে জাগিয়ে তুললেই তার পরমায়ু বেড়ে ওঠে। নিজের অসহিষ্ণুতায় তার আয়ু বাড়িয়ে তোলার মত পাপ আর নেই। তাঁর এই উপদেশটি তুমিও কখনো ভুলো না রমেশদা।
[রমেশ নীরবে তাহার মুখের প্রতি চাহিয়া রহিল]
রমা। আজ আমাকে তুমি ক্ষমা করতে পারচ না ভেবে দুঃখ পেয়ো না রমেশদা। আমি ঠিক জানি আজ যা কঠিন মনে হচ্ছে, একদিন তাই সোজা হয়ে যাবে। সেদিন আমার সকল অপরাধ তুমি সহজেই ক্ষমা করবে জেনে মনের মধ্যে আর আমার ক্লেশ নেই।—কাল সকালেই আমি যাচ্চি।
রমেশ। কাল সকালেই? কোথায় যাবে কাল?
রমা। জ্যাঠাইমা যেখানে নিয়ে যাবেন আমি সেইখানেই যাব।
রমেশ। কিন্তু তিনি ত আর আসবেন না শুনচি।
রমা। আমিও না। আমিও তোমার পায়ে আজ জন্মের মতই বিদায় নিলাম।
[এই বলিয়া রমা মাটিতে মাথা ঠেকাইয়া প্রণাম করিল]
রমেশ। আচ্ছা যাও। কিন্তু অকস্মাৎ কেন বিদায় নিলে তাও কি জানতে পারব না?
[রমা মৌন হইয়া রহিল]
রমেশ। কেন যে তোমার সমস্ত কথাই লুকিয়ে রেখে চলে গেলে সে তুমিই জান। কিন্তু আমিও কায়মনে প্রার্থনা করি, একদিন যেন তোমাকে সর্বান্তঃকরণে ক্ষমা করতে পারি। তোমাকে ক্ষমা করতে না পারায় যে আমার কি ব্যথা, সে শুধু আমিই জানি।
[এই সময়ে বিশ্বেশ্বরী প্রবেশ করিয়া ডাকিলেন—]
বিশ্বেশ্বরী। রমা!
রমেশ। জ্যাঠাইমা! কি অপরাধে আমাদের এত শীঘ্র ত্যাগ করে চললে?