ষোড়শী
নাট্যোল্লিখিত ব্যক্তিগণ
পুরুষ
জীবানন্দ চৌধুরী: চণ্ডীগড়ের জমিদার
প্রফুল্ল রায়: জীবানন্দের সেক্রেটারি
এককড়ি নন্দী: ঐ গোমস্তা
জনার্দন রায়: মহাজন
নির্মল বসু: ঐ জামাতা ও ব্যারিস্টার
শিরোমণি: ব্রাহ্মণ পণ্ডিত
তারাদাস চক্রবর্তী: ষোড়শীর পিতা
সাগর সর্দার: ষোড়শীর অনুচর
পূজারী, ম্যাজিস্ট্রেট, ইন্স্পেক্টার, সাব-ইন্স্পেক্টার, বল্লভ ডাক্তার, ফকির, হরিহর, বিশ্বম্ভর, ভিক্ষুকদ্বয়, মহাবীর, বেহারা, ভৃত্য, পথিক, গাড়োয়ান, পাইকগণ ইত্যাদি।
স্ত্রী
ষোড়শী: গড়চণ্ডীর ভৈরবী
হৈমবতী: জনার্দনের কন্যা ও নির্মলের স্ত্রী
ভিক্ষুক-কন্যা, নারীগণ ইত্যাদি।
প্রথম অঙ্ক
প্রথম দৃশ্য
চণ্ডীগড়—গ্রাম্যপথ
[বেলা অপরাহ্নপ্রায়। চণ্ডীগড়ের সঙ্কীর্ণ গ্রাম্যপথের পরে সন্ধ্যার ধূসর ছায়া নামিয়া আসিতেছে। অদূরে বীজগাঁ'র জমিদারী কাছারিবাটীর ফটকের কিয়দংশ দেখা যাইতেছে। জন-দুই পথিক দ্রুতপদে চলিয়া গেল, তাঁহাদেরই পিছনে একজন কৃষক মাঠের কর্ম শেষ করিয়া গৃহে ফিরিতেছিল, তাহার বাঁ-কাঁধে লাঙ্গল, ডান হাতে ছড়ি, অগ্রবর্তী অদৃশ্য বলদযুগলের উদ্দেশে হাঁকিয়া বলিতে বলিতে গেল, “ধলা, সিধে চ' বাবা, সিধে চল! কেলো, আবার আবার! আবার পরের গাছপালায় মুখ দেয়!”
কাছারির গোমস্তা এককড়ি নন্দী ধীরে ধীরে প্রবেশ করিল এবং উৎকণ্ঠিত শঙ্কায় পথের একদিকে যতদূর দৃষ্টি যায় গলা বাড়াইয়া কিছু একটা দেখিবার চেষ্টা করিতে লাগিল। তাহার পিছনের পথ দিয়া দ্রুতপথে বিশ্বম্ভর প্রবেশ করিল। সে কাছারির বড় পিয়াদা, তাগাদায় গিয়াছিল, অকস্মাৎ সংবাদ পাইয়াছে বীরগাঁ'র নবীন জমিদার জীবানন্দ চৌধুরী চণ্ডীগড়ে আসিতেছেন। ক্রোশ-দুই দূরে তাঁহার পালকি নামাইয়া বাহকেরা ক্ষণকালের জন্য বিশ্রাম লইতেছিল, আসিয়া পড়িল বলিয়া]
বিশ্বম্ভর। নন্দীমশাই, দাঁড়িয়ে করতেছ কি? হুজুর আসছেন যে!
এককড়ি। (চমকিয়া মুখ ফিরাইল। এ দুঃসংবাদ ঘণ্টা-খানেক পূর্বে তাহার কানে পৌঁছিয়াছে। উদাস-কণ্ঠে কহিল) হুঁ।
বিশ্বম্ভর। হুঁ কি গো? স্বয়ং হুজুর আসছেন যে!
এককড়ি। (বিকৃত-স্বরে) আসছেন ত আমি করব কি? খবর নেই, এত্তালা নেই—হুজুর আসছেন। হুজুর বলে ত আর মাথা কেটে নিতে পারবে না!
বিশ্বম্ভর। (এই আকস্মিক উত্তেজনার অর্থ উপলব্ধি না করিতে পারিয়া একমুহূর্ত মৌন থাকিয়া শুধু কহিল) আরে, তুমি কি মরিয়া হয়ে গেলে নাকি?
এককড়ি। মরিয়া কিসের! মামার বিষয় পেয়েছে বৈ ত কেউ আর বাপের বিষয় বলবে না! তুই জানিস বিশু, কালীমোহনবাবু ওকে দূর করে দিয়েছিল, বাড়ি ঢুকতে পর্যন্ত দিত না। তেজ্যপুত্তুরের সমস্ত ঠিকঠাক, হঠাৎ খামকা মরে গেল বলেই ত জমিদার! নইলে থাকতেন আজ কোথায়? আমি জানি নে কি?
বিশ্বম্ভর। কিন্তু জেনে সুবিধেটা কি হচ্চে শুনি? এ মামা নয়, ভাগ্নে। ও-কথা ঘুণাগ্রে কানে গেলে ভিটেয় তোমার সন্ধ্যে দিতেও কাউকে বাকি রাখবে না। ধরবে আর দুম করে গুলি করে মারবে। এমন কত গণ্ডা এরই মধ্যে মেরে পুঁতে ফেলেছে জানো? ভয়ে কেউ কথাটি পর্যন্ত কয় না।
এককড়ি। হাঁ:—কথা কয় না! মগের মুল্লুক কিনা!
বিশ্বম্ভর। আরে মাতাল যে! তার কি হুঁশ পবন আছে, না দয়া-মায়া আছে! বন্দুক-পিস্তল-ছুরি-ছোরা ছাড়া এক পা কোথাও ফেলে না। মেরে ফেললে তখন করবে কি শুনি?
এককড়ি। তুই ত সেদিন সদরে গিয়েছিলি—দেখেচিস তাকে?