এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

নাটক  :  ষোড়শী         
পরিচ্ছেদ: / 4
পৃষ্ঠা: / 54
বিশ্বম্ভর। না, ঠিক দেখিনি বটে, তবে সে দেখাই। ইয়া গালপাট্টা, ইয়া গোঁফ, ইয়া বুকের ছাতি, জবাফুলের মত চোখ ভাঁটার মত বন্‌বন্‌ করে ঘুরচে—

এককড়ি। বিশু, তবে পালাই চ'।

বিশ্বম্ভর। আরে পালিয়ে ক'দিন তার কাছে বাঁচবে নন্দীমশাই? চুলের ঝুঁটি ধরে টেনে এনে খাল খুঁড়ে পুঁতে ফেলবে।

এককড়ি। কি তবে হবে বল? মাতালটা যদি বলে বসে শান্তিকুঞ্জেই থাকব?

বিশ্বম্ভর। কতবার ত বলেছি নন্দীমশাই, এ কাজ করো না, করো না, করো না। বছরের পর বছর খাতায় কেবল শান্তিকুঞ্জের মিথ্যে মেরামতি খরচই লিখে গেলে, গরীবের কথায় ত আর কান দিলে না।

এককড়ি। তুইও ত কাছারির বড় সর্দার, তুইও ত—

বিশ্বম্ভর। দেখ, ও-সব শয়তানি ফন্দি করো না বলচি! আমার ওপর দোষ চাপিয়েছ কি—ওগো, ওই যে একটা পালকি দেখা যায়! [নেপথ্যে বাহকদিগের কণ্ঠধ্বনি শুনা গেল। বিশ্বম্ভর পলায়নোদ্যত এককড়ির হাতটা ধরিয়া ফেলিতেই সে নিজেকে মুক্ত করিবার চেষ্টা করিতে করিতে]

এককড়ি। ছাড়্‌না হারামজাদা।

বিশ্বম্ভর। (অনুচ্চ চাপাকণ্ঠে) পালাচ্চো কোথায়? ধরলে গুলি করে মারবে যে!

[এমনি সময় পালকি সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত হইতে উভয়ে স্থির হইয়া দাঁড়াইল। পালকির অভ্যন্তরে জমিদার জীবানন্দ চৌধুরী বসিয়াছিলেন, তিনি ঈষৎ একটুখানি মুখ বাহির করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন]

জীবানন্দ। ওহে, এ গ্রামে জমিদারের কাছারি বাড়িটা কোথায় তোমরা কেউ বলে দিতে পার?

এককড়ি। (করজোড়ে) সমস্তই ত হুজুরের রাজ্য।

জীবানন্দ। রাজ্যের খবর জানতে চাইনি। কাছারিটার খবর জানো?

এককড়ি। জানি হুজুর। ওই যে।

জীবানন্দ। তুমি কে?

[এককড়ি ও বিশ্বম্ভর উভয়ে হাঁটু গাড়িয়া ভূমিষ্ঠ প্রণাম করিয়া উঠিয়া দাঁড়াইল]

এককড়ি। হুজুরের নফর এককড়ি নন্দী।

জীবানন্দ। ওহো, তুমিই এককড়ি—চণ্ডীগড়-সাম্রাজ্যের বড়কর্তা? কিন্তু দেখ এককড়ি, একটা কথা বলে রাখি তোমাকে। চাটুবাক্য অপছন্দ করিনে সত্যি, কিন্তু তার একটা কাণ্ডজ্ঞান থাকাটাও পছন্দ করি! এটা ভুলো না। তোমার কাছারির তসিল কত?

এককড়ি। আজ্ঞে, চণ্ডীগড় তালুকের আয় প্রায় হাজার-পাঁচেক টাকা।

জীবানন্দ। হাজার-পাঁচেক?—বেশ।

[বাহকেরা পালকি নীচে নামাইল। জীবানন্দ অবতরণ করিলেন না, শুধু পা-দুটা বাহির করিয়া ভূমিতলে রাখিয়া সোজা হইয়া বসিয়া কহিলেন]

বেশ। আমি এখানে দিন পাঁচ-ছয় আছি, কিন্তু এরই মধ্যে আমার হাজার-দশেক টাকা চাই এককড়ি। তুমি সমস্ত প্রজাদের খবর দাও যেন কাল তারা এসে কাছারিতে হাজির হয়।

এককড়ি। যে আজ্ঞে। হুজুরের আদেশে কেউ গরহাজির থাকবে না।

জীবানন্দ। এ গাঁয়ে দুষ্টু বজ্জাত প্রজা কেউ আছে জানো?

এককড়ি। আজ্ঞে, না তা এমন কেউ—শুধু তারাদাস চক্কোত্তি—তা সে আবার হুজুরের প্রজা নয়।

জীবানন্দ। তারাদাসটা কে?

এককড়ি। গড়চণ্ডীর সেবায়েত।

জীবানন্দ। এই লোকটাই কি বছর-দুই পূর্বে একটা প্রজা-উৎখাতের মামলায় মামার বিপক্ষে সাক্ষী দিয়েছিল?

এককড়ি। (মাথা নাড়িয়া) হুজুরের নজর থেকে কিছুই এড়ায় না। আজ্ঞে, এই সেই তারাদাস।

জীবানন্দ। হুঁ। সেবার অনেক টাকার ফেরে ফেলে দিয়েছিল। এ কতখানি জমি ভোগ করে?

এককড়ি। (মনে মনে হিসাব করিয়া) ষাট-সত্তর বিঘের কম নয়।

জীবানন্দ। একে তুমি আজই কাছারিতে ডেকে আনিয়ে জানিয়ে দাও যে, বিঘেপ্রতি আমার দশ টাকা নজর চাই।