এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

গল্প  :  অনুরাধা         
পরিচ্ছেদ: / 7
পৃষ্ঠা: / 25
বিকালে অফিস হইতে ফিরিয়া বিজয় ও মহলে বৌদিদির সঙ্গে দেখা করিতে গেল। গিয়া দেখিল সেখানে বাধিয়াছে কুরুক্ষেত্র কাণ্ড। প্রসাধনের জিনিসপত্র ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত, দাদা ইজিচেয়ারের হাতলে বসিয়া প্রবল-কণ্ঠে বলিতেছেন, কখ্‌খনো না। যেতে হয় একলা যাও। এমন কুটুম্বিতেয় আমি দাঁড়িয়ে—ইত্যাদি।

অকস্মাৎ বিজয়কে দেখিয়া প্রভা হাউমাউ করিয়া কাঁদিয়া ফেলিল,—ঠাকুরপো, তারা যদি সিতাংশুর সঙ্গে অনিতার বিয়ে ঠিক করে থাকে সে কি আমার দোষ? আজ পাকাদেখা, উনি বলচেন যাবেন না। তার মানে আমাকেও যেতে দেবেন না।

দাদা গর্জিয়া উঠিলেন—তুমি জানতে না বলতে চাও? আমাদের সঙ্গে এ জুচ্চুরি চালাবার এতদিন কি দরকার ছিল?

কথাটা সহসা ধরিতে না পারিয়া বিজয় হতবুদ্ধি হইল, কিন্তু বুঝিতেও বিলম্ব হইল না, কহিল, রসো রসো। হয়েচে কি বল ত? অনিতার সঙ্গে সিতাংশু ঘোষালের বিয়ের সম্বন্ধ পাকা হয়েছে? আজই তার পাকাদেখা? I am thrown completely overboard!

দাদা হুঙ্কার দিলেন—হুঁ। আর উনি বলতে চান কিছুই জানতেন না!

প্রভা কাঁদিয়া বলিল, আমি কি করতে পারি ঠাকুরপো। দাদা রয়েচেন, মা রয়েচেন, মেয়ে নিজে বড় হয়েচে, তারা যদি কথা ভাঙ্গে আমার দোষ কি?

দাদা বলিলেন, দোষ এই যে তারা ধাপ্পাবাজ ভণ্ড মিথ্যেবাদী। একদিকে কথা দিয়ে আর একদিকে গোপনে টোপ ফেলে বসেছিল। এখন লোকে মুখ টিপে হাসবে,—আমি ক্লাবে পার্টিতে লজ্জায় মুখ দেখাতে পারব না।

প্রভা তেমনি কান্নার সুরে বলিতে লাগিল, এমনধারা কি আর হয় না? তাতে তোমার লজ্জা কিসের?

আমার লজ্জা সে তোমার বোন বলে। আমার শ্বশুরবাড়ির সবাই জোচ্চোর বলে। তাতে তোমারও একটা বড় অংশ আছে বলে।

দাদার মুখের প্রতি চাহিয়া এবার বিজয় হাসিয়া ফেলিল, কিন্তু তৎক্ষণাৎ হেঁট হইয়া প্রভার পায়ের ধূলা মাথায় লইয়া প্রসন্নমুখে কহিল, বৌদি, দাদা যত গর্জনই করুন, আমি রাগ বা দুঃখ ত করবই না, বরঞ্চ সত্যিই যদি এতে তোমার অংশ থাকে, তোমার কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকব। মুখ ফিরাইয়া বলিল, দাদা, রাগ করা তোমার সত্যিই বড় অন্যায়। এ ব্যাপারে কথা দেওয়ার কোন অর্থ নেই যদি পরিবর্তনের সুযোগ থাকে। বিয়েটা ত ছেলেখেলা নয়। সিতাংশু আই. সি. এস. হয়ে ফিরেচে। সে একটা বড় দরের লোক। অনিতা দেখতে ভালো, বি. এ. পাস করেছে—আর আমি? এখানেও পাস করিনি, বিলেতেও সাত–আট বচ্ছর কাটিয়ে একটা ডিগ্রি যোগাড় করতে পারিনি, —সম্প্রতি কাঠের দোকানে কাঠ বিক্রি করে খাই, না আছে পদ-গৌরব, না আছে খেতাব। অনিতা কোন অন্যায় করেনি দাদা।