এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

গল্প  :  অনুরাধা         
পরিচ্ছেদ: / 7
পৃষ্ঠা: / 25
সাত

কুমার আসে নাই শুনিয়া মা আতঙ্কে শিহরিয়া উঠিলেন—সে কি কথা রে! যার সঙ্গে ঝগড়া তার কাছেই ছেলে রেখে এলি?

বিজয় বলিল, যার সঙ্গে ঝগড়া সে গিয়ে পাতালে ঢুকেচে মা, তাকে খুঁজে বার করে সাধ্য কার? তোমার নাতি রইল তার মাসীর কাছে। দিন-কয়েক পরেই আসবে।

হঠাৎ মাসী এল কোথা থেকে রে?

বিজয় বলিল, ভগবানের তৈরি সংসারে হঠাৎ কে যে কোথা থেকে এসে পৌঁছায়, মা, কেউ বলতে পারে না। যে তোমার টাকাকড়ি নিয়ে ডুব মেরেছে এ সেই গগন চাটুয্যের ছোটবোন। বাড়ি থেকে একেই তাড়াব বলে লাঠিসোঁটা পিয়াদা-পাইক নিয়ে রণসজ্জায় যাত্রা করেছিলুম, কিন্তু তোমার আপনার নাতিই করলে গোল। এমনি তার আঁচল চেপে রইল যে দু’জনকে একসঙ্গে না তাড়ালে আর তাড়ানো চলল না।

মা ব্যাপারটা আন্দাজ করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, কুমার বুঝি তার খুব অনুগত হয়ে পড়েচে? মেয়েটা খুব যত্নআত্তি করে বুঝি? বাছা যত্ন ত কখনো পায় না। এই বলিয়া তিনি নিজের অস্বাস্থ্য স্মরণ করিয়া নিঃশ্বাস ফেলিলেন।

বিজয় বলিল, আমি ছিলুম বাইরে, বাড়ির ভেতরে কে কাকে কি যত্ন করত চোখে দেখিনি, কিন্তু আসবার সময়ে কুমার মাসীকে ছেড়ে কিছুতে আসতে চাইলে না।

মার তথাপি সন্দেহ ঘুচিল না, বলিলেন, ওরা পাড়াগাঁয়ের মেয়ে, কত রকম জানে। সঙ্গে না এনে ভালো করিস নি বাবা।

বিজয় বলিল, তুমি নিজে পাড়াগাঁয়ের মেয়ে হয়ে পাড়াগাঁয়ের বিরুদ্ধে তোমার এই নালিশ! শেষকালে তোমার বিশ্বাস গিয়ে পড়ল বুঝি শহরের মেয়ের ওপর?

শহরের মেয়ে! তাঁদের চরণে কোটি কোটি নমস্কার!—এই বলিয়া মা দুই হাত এক করিয়া কপালে ঠেকাইলেন।

বিজয় হাসিয়া ফেলিল।

মা বলিলেন, হাসচিস কি রে! আমার দুঃখ কেবল আমিই জানি, আর জানেন তিনি। বলিতে বলিতে তাঁহার চোখ ছলছল করিয়া আসিল, কহিলেন, আমরা যখনকার, সে পাড়াগাঁ কি আর আছে বাবা? দিন-কাল সব বদলে গেছে।

বিজয় বলিল, অনেক বদলেছে, কিন্তু যতদিন তোমরা বেঁচে আছ বোধ হয় তোমাদের পুণ্যেই এখনো কিছু বাকি আছে মা, একেবারে লোপ পায়নি। তারই একটুখানি এবারে দেখে এলুম। কিন্তু তোমাকে যে সে জিনিস দেখাবার জো নেই এই দুঃখটাই মনে রইল। এই বলিয়া সে অফিসে বাহির হইয়া গেল। অফিসের কাজের তাড়াতেই ব্যস্ত হইয়া তাহাকে চলিয়া আসিতে হইয়াছে।