এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

অজ্ঞাত রচনা  :  বারোয়ারি উপন্যাস         
পরিচ্ছেদ: / 2
পৃষ্ঠা: / 9
হরেনের মুখে সহসা কোন উত্তর যোগাল না, এবং ক্ষিতীশ বিস্ময়ে দুই চক্ষু বিস্ফারিত কোরে চেয়ে রইল । কিন্তু এ কথা বুঝতে আর তাদের বাকী রইলো না যে, তাদের উভয়ের সম্মিলিত দুশ্চিন্তাকেও বহুদূরে অতিক্রম করে আর একজনের উদ্বেগ কোথায় এগিয়ে গেছে।

কমলা তাড়াতাড়ি চোখের জল মুছে ফেলে বললে, তোমরা মনে কোরো না ক্ষিতীশদা, তোমাদের দয়া আমি কোনদিন ভুলতে পারবো, কিন্তু আজ তোমাদের হাত জোড় করে জানাচ্ছি ভাই,—বলতে বলতেই তার দু' চোখ বেয়ে ঝরঝর করে আবার জল গড়িয়ে পড়ল, কিন্তু এবার সে-জল সে মোছবার চেষ্টাও করলে না, হাত-দুটি জোড় করে বলতে লাগল—আমার জন্যে তোমরা যে কত দুঃখ পেলে, সে আমি জানি, আর ভগবানই জানেন, কিন্তু আর একটা দিনও না। আজ থেকে আমার দুর্ভাগ্যের সমস্ত ভারই আমি নিজের মাথায় তুলে নিলুম। ক্ষিতীশদা, একদিন যেমন আমাকে তুমি পথ থেকে এনে বাঁচিয়েছিলে, আজ তেমনি আমাকে কেবল এই আশীর্বাদ তুমি কর, এর থেকেও একটা যেন কোথাও কূল পাই,—আর না তোমাদের দুঃখ দিতে ফিরে আসি!

ক্ষিতীশ চোখ ফিরিয়ে বোধ হয় তার চোখের জলটাই গোপন করলে, কিন্তু হরেন বললে, আমরা দুজনে সেই আশীর্বাদই তোকে করি কমলা, আমি বলচি এ বিপদ একদিন তোর কেটে যাবেই, কিন্তু কাল সকালে আমিও কেন তোর সঙ্গে যাইনে?

কমলা ঘাড় নেড়ে জানালে, না।

হরেন উত্তেজনার সঙ্গে বলে উঠলো, না কেন কমলা? আমি যদি তোর সত্যিকারের দাদা হতুম, তাহলে ত তুই না বলতে পারতিস নে।

তার শেষ কথাটায় এত দুঃখেও কমলার মুখখানি লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে গেল, সে অধোমুখে তেমনি নীরবে মাথা নেড়ে বললে—না।

তার এই লজ্জাটা হরেনের অগোচর রইল না। কিন্তু পরস্পরের নাম নিয়ে এই যে একটা লজ্জাকর অপবাদ, একে সে যে বিন্দুমাত্র স্বীকার করে না, এই কথাটাই সদর্পে জানাবার জন্যে হরেন তীব্রকন্ঠে বলে ফেললে, তুই কি ভাবিস কমলা আমি মিথ্যে দুর্নামকে ভয় করি? বাবার অন্যায় শাসন গ্রাহ্য করি? আমি যাবো তোর সঙ্গে, দেখি গ্রামের কে আমার মুখের সামনে তোকে কিছু বলতে পারে। তার জবাব আমি দিতে পারবো, কিন্তু ছেলেমানুষ অরুণ পারবে না।