এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

অজ্ঞাত রচনা  :  বারোয়ারি উপন্যাস         
পরিচ্ছেদ: / 2
পৃষ্ঠা: / 9
কমলা সজল চোখ দুটি তার মুখের পানে তুলে বললে, অরুণ পারবে না সত্যি, কিন্তু তোমারও পেরে কাজ নেই হরেনদা। আমার বোঝা আমাকে বইতে দাও, আর আমার সমস্যাকে তোমরা জটিল করে তুলো না।

হরেন বললে, গ্রামের লোকগুলোকে একবার ভেবে দেখ কমলা, সেখানে একাকী তোর অদৃষ্টে কি যে না ঘটতে পারে, সে ত আমি ভেবেও পাইনে!

কমলা যেন ক্লান্ত হয়ে পড়ছিল। সে আর কথা কাটাকাটি না করে শুধু উপরের দিকে মুখ তুলে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে ধীরে ধীরে বললে—তিনিই জানেন। এই বলে সে হাত দুটি মাথায় ঠেকিয়ে নিয়ে কাকে যেন প্রণাম করেই দ্রুতপদে উঠে অন্য ঘরে চলে গেল।

কয়েক মুহূর্ত কারো মুখ দিয়েই কোন কথা বার হল না, সবাই যেন নিস্পন্দ হয়ে বসে রইল। খানিক পরে অরুণ বললে—আমি কিন্তু একটা সুবিধে করে এসেছি হরেনদা। জামাইবাবুর মাকে বলে এসেছি, দিদি হারিয়ে যাবার পরে অসুখ থেকে সেরে উঠে পর্যন্ত বরাবর আমার কাছেই আছেন। ঠিক করিনি ক্ষিতীশদা? অবশ্য তোমাদের নামও করেছি বটে।

হরেন বললে, দূর পাগলা! তুই ছেলেমানুষ, কলকাতায় কমলা তোর কাছে আছে, এ কথা কেউ কখনো বিশ্বাস করে? কি বল হে ক্ষিতীশ?

ক্ষিতীশ হঠাৎ চমকে উঠে বললে, হুঁ। বলেই লজ্জিত মুখে উঠে দাঁড়িয়ে একটুখানি হেসে বললে, আমার ভারী ঘুম পাচ্চে হরেন, আমি চললুম।—বলে ঠিক যেন টলতে টলতে তার নিজের ঘরে চলে গেল।

নিজের বাড়িতে তাদের কোন খেয়াল না করে ক্ষিতীশ শুতে গেল, এটা তার স্বভাবের এমনি বিরুদ্ধ যে হরেন ও অরুণের বিস্ময়ের সীমা রইল না। কিন্তু যথার্থই আজ ক্ষিতীশের এদিকে দৃষ্টি দেবার সাধ্যই ছিল না। বহুক্ষণ থেকেই সে অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল, এত আলোচনা ও তর্কবিতর্ক অর্ধেক বোধ হয় তার কানেই যায়নি। সেখানে কেবল একটা কথাই বারংবার প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল, সমস্ত প্রকাশ হয়ে গেছে, সমস্ত প্রকাশ হয়ে গেছে! তার মনের নিভৃত গুহায় যত কিছু আশা সঞ্চিত হয়ে উঠছিল, কমলার কাছে সমস্ত ধরা পড়ে গেছে, তার কোথাও কিছু আর লুকোনো নেই! তাই সে আজ ভয়ে ভীত হরিণীর মত ছুটে পালাতে চায়। আজ তার সকল যত্ন, সকল সেবা, সকল পরিশ্রম একেবারে ব্যর্থ, একেবারে নিরর্থক।