এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

উপন্যাস  :  গৃহদাহ         
পরিচ্ছেদ: / 44
পৃষ্ঠা: / 212
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

বছর-পাঁচেক পরে দুই বন্ধুতে এইরূপ কথাবার্তা হইতেছিল।

তোমার উপর আমার যে কত শ্রদ্ধা ছিল মহিম, তা বলতে পারি না।

বলবার জন্য তোমাকে পীড়াপীড়ি করচি না সুরেশ।

সে শ্রদ্ধা বুঝি আর থাকে না।

না থাকলে তোমাকে দণ্ড দেবো, এমন ভয় ত কখনও দেখাই নি।

তোমাকে কপটতা দোষ দিতে তোমার অতি-বড় শত্রুও কখনও পারত না।

শত্রু পারত না বলে কাজটা যে মিত্রও পারবে না, দর্শন-শাস্ত্রের এমন অনুশাসন ত নেই।

ছি ছি, শেষকালে কিনা একটা ব্রাহ্মমেয়ের কাছে ধরা দিলে? কি আছে ওদের? ঐ শুকনো কাঠপানা চেহারা, বই মুখস্থ করে করে গায়ে কোথাও একফোঁটা রক্ত পর্যন্ত যেন নেই। ঠেলা দিলে আধখানা দেহ খসে পড়ছে বলে ভয় হয়—গলার স্বরটা পর্যন্ত এমনি চিঁ চিঁ করে যে শুনলে ঘৃণা হয়।

তা হয় সত্য।

দেখ মহিম, ঠাট্টা কর গে তোমাদের পাড়াগাঁয়ের লোককে, যে ব্রাহ্মমেয়ে কখনো চোখে দেখেনি; মেয়েমানুষ ইংরাজিতে ঠিকানা লিখতে পারে শুনলে যারা আশ্চর্য অবাক হয়ে যায়—তিনি চলে গেলে যারা সসম্ভ্রমে দূরে সরে দাঁড়ায়। বিস্ময়ে অভিভূত করে দাও গে তোমার গ্রামের লোককে, যারা এঁকে দেব-দেবী মনে করে মাথা লুটিয়ে দেবে। কিন্তু আমাদের বাড়ি ত পাড়াগাঁয়ে নয়—আমাদের ত অত সহজে ভুলানো যায় না।

আমি তোমাকে শপথ করে বলচি সুরেশ, তোমাদের শহরের লোককে ভুলোবার আমার কোন দুরভিসন্ধি নেই। আমি তাঁকে আমাদের পাড়াগাঁয়ে নিয়েই রাখব। তাতে ত তোমার আপত্তি নাই?

সুরেশ রাগিয়া উঠিয়া বলিতে লাগিল, আপত্তি নেই? শত, সহস্র, লক্ষ, কোটি আপত্তি আছে। তুমি সমস্ত জগতের বরেণ্য পূজনীয় হিন্দুর সন্তান হয়ে কিনা একটা রমণীর মোহে জাত দেবে? মোহ! একবার তার জুতো-মোজা শৌখিন পোশাক ছাড়িয়ে নিয়ে আমাদের গৃহলক্ষ্মীদের রাঙ্গা শাড়িখানি পরিয়ে দেখ দেখি, মোহ কাটে কি না! তখন ঐ নির্জীব কাঠের পুতুলটার রূপ দেখে তোমার ভুল ভাঙ্গে কি না! কি আছে তার? কি পারে সে? বেশ ত, তোমার যদি সেলাই আর পশমের কাজই এত দরকার, কলকাতা শহরে দরজির ত অভাব নেই। একখানা চিঠির ঠিকানা লেখবার জন্য ত তোমাকে ব্রাহ্মমেয়ের দ্বারস্থ হতে হবে না। তোমার অসময়ে সে কি বাটনা বেটে, কুটনো কুটে তোমাকে একমুঠো ভাত রেঁধে দেবে? রোগে তোমার কি সেবা করবে? সে শিক্ষা কি তাদের আছে? ভগবান না করুন, কিন্তু সে দুঃসময়ে সে যদি না তোমাকে ছেড়ে চলে আসে ত আমার সুরেশ নামের বদলে যা ইচ্ছে বলে ডেক, আমি দুঃখ করব না।