এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

উপন্যাস  :  গৃহদাহ         
পরিচ্ছেদ: / 44
পৃষ্ঠা: / 212
মহিম চুপ করিয়া রহিল। সুরেশ পুনরায় কহিতে লাগিল, মহিম, তুমি ত জান, আমি তোমার মঙ্গল ভিন্ন কখনো ভুলেও অমঙ্গল কামনা করতে পারিনে। আমি অনেক ব্রাহ্ম মহিলা দেখেছি। দু-একটি ভালও যে দেখিনি, তা নয়; কিন্তু আমাদের হিন্দুঘরের মেয়ের সঙ্গে তাঁদের তুলনাই হয় না। তোমার বিবাহেই যদি প্রবৃত্তি হয়েছিল, আমাকে বললে না কেন? আচ্ছা, যা হবার হয়েছে, আর তোমার সেখানে গিয়ে কাজ নাই। আমি কথা দিচ্ছি, এক মাসের মধ্যে তোমাকে এমন কন্যা বেছে দেব যে, জীবনে কখনো দুঃখ পেতে হবে না; যদি না পারি, তখন না হয় তোমার যা ইচ্ছা করো—এর শ্রীচরণেই মাথা মুড়িও, আমি বাধা দেব না; কিন্তু এই একটা মাস তোমাকে ধৈর্য ধরে আমাদের আশৈশব বন্ধুত্বের মর্যাদা রাখতেই হবে। বল রাখবে ?

মহিম পূর্ববৎ মৌন হইয়া রহিল—হাঁ, না, কোন কথাই কহিল না। কিন্তু বন্ধু যে বন্ধুর শুভকামনায় কিরূপ মর্মান্তিক বিচলিত হইয়াছে, তাহা সম্পূর্ণ অনুভব করিল।

সুরেশ কহিল, মনে করে দেখ দেখি মহিম, ব্রাহ্ম না হয়েও তুমি যখন প্রথম ব্রাহ্ম-মন্দিরে যাতায়াত শুরু করলে, তখন কি তোমাকে বারংবার নিষেধ করিনি? তোমার জন্যে এত বড় এই কলকাতা শহরের মধ্যে কি একটাও হিন্দু-মন্দির ছিল না যে, এই কপটতার কিছুমাত্র আবশ্যকতা ছিল? এমনিভাবে একটা-না-একটা বিড়ম্বনার ভেতরে যে অবশেষে জড়িয়ে পড়বে, আমি তখনই সন্দেহ করেছিলাম।

মহিম এবার একটুখানি হাসিয়া কহিল, তা যেন করেছিলে, কিন্তু আমি ত তা করি নাই যে, আমার যাওয়ার মধ্যে কপটতা ছিল। কিন্তু একটা কথা জিজ্ঞাসা করি সুরেশ, তুমি ত নিজে ভগবান পর্যন্ত মান না, যে হিন্দুর ঠাকুর-দেবতা মানবে! আমি ব্রাহ্মের মন্দিরেই যাই, আর হিন্দুর মন্দিরেই যাই তাতে তোমার কি আসে যায়?

সুরেশ দৃপ্তস্বরে কহিল, যা নেই, তা আমি মানিনে। ভগবান নেই, ঠাকুর-দেবতা মিছে কথা। কিন্তু যা আছে, তাদের ত অস্বীকার করিনে। সমাজকে আমি শ্রদ্ধা করি, মানুষকে পূজা করি। আমি জানি, মানুষের সেবা করাই মনুষ্যজন্মের চরম সার্থকতা। যখন হিন্দুর বংশে জন্মেছি, তখন হিন্দুসমাজ রক্ষা করাই আমার কাজ। আমি প্রাণান্তে তোমাকে ব্রাহ্মঘরে বিবাহ করে ব্রাহ্মের দল-পুষ্টি করতে দেব না। কেদার মুখুয্যের মেয়েকে বিবাহ করবে বলে কি কথা দিয়েছ?

না, কথা যাকে বলে, তা এখনও দিইনি।

দাওনি ত! বেশ! তবে চুপ করে বসে থাক গে, আমি এই মাসের মধ্যেই তোমার বিবাহ দিয়ে দেব।

আমি বিবাহের জন্য পাগল হয়ে উঠেছি তোমায় কে বললে? তুমিও চুপ করে বসে থাক গে, আর কোথাও বিবাহ করা আমার পক্ষে অসম্ভব।

কেন অসম্ভব? কি করেছ? এই স্ত্রীলোকটাকে ভালবেসেছ?

আশ্চর্য নয়। কিন্তু এই ভদ্রমহিলার সম্বন্ধে সম্ভ্রমের সঙ্গে কথা বল সুরেশ।

সম্ভ্রমের সঙ্গে কথা বলতে আমি জানি, আমাকে শেখাতে হবে না। আমি সেই সম্ভ্রান্ত মহিলাটির বয়স কত জিজ্ঞাসা করতে পারি কি?

জানি না।

জান না? কুড়ি, পঁচিশ, ত্রিশ, চল্লিশ কিংবা আরও বেশি—কিছুই জান না?

না।

তোমার চেয়ে ছোট, না বড়—তাও বোধ করি জান না?

না।