এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

পুস্তকাকারে অপ্রকাশিত রচনা  :  মুসলিম সাহিত্য-সমাজ         
পরিচ্ছেদ: / 1
পৃষ্ঠা: / 9
আমার জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছে করে, মুসলিমের এই ‘নবস্ফূর্ত আত্মপ্রকাশ,’ ইসলামী কৃষ্টির এই ‘বলিষ্ঠ জাগরণ’, যাঁরা নবীন, উদার বাংলা ভাষাকে যাঁরা অকুণ্ঠিত মনে মাতৃভাষা বলে স্বীকার করেন, তাঁদের—না যাঁরা পুরাতনপন্থী, তাঁদের? আমার অভিমত এই যে, যাঁরা প্রাচীনপন্থী, যাঁরা পিছনে ছাড়া সুমুখে চাইতে জানেন না, তাঁদের জাগরণ, কি মুসলিম কি হিন্দু, সকল সমাজেরই বিঘ্নস্বরূপ। হিন্দুদের সম্বন্ধে এ কথা আমি বহুবার বহুস্থানে লিখেছি, মুসলিম-সমাজের সম্বন্ধেও অসংশয়ে বলতে পারি, এ জাগরণ হয় যদি নবীনের—আসুক সে শ্রাবণের পূর্ণিমা জোয়ারের মত সমস্ত ভাসিয়ে দিয়ে, তবু তাকে আমি দু-হাত তুলে সংবর্ধনা করে নেবো। জানবো, এদের হাতে সমস্তই হবে শুভ এবং সুন্দর—এদের হাতে হিন্দু-মুসলিম কারও ভয় নেই—এদের হাতে আমরা দুজনেই হবো নিরাপদ। আমার আশঙ্কা শুধু প্রাচীনপন্থীদের সম্বন্ধে।

তিনি পরে বলেছেন, “ শরৎচন্দ্রের মত সাহিত্যিকদের সম্প্রদায়, জাতি, এক ছাড়া দুই নয়। এ কথা সহজেই আমাদের স্বীকৃতি দাবী করতে পারে। কিন্তু আরও একটি সহজ কথার দিকে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করি। সেটি এই যে সাহিত্য মানুষের মনের সৃষ্টি, এবং মানুষের মনকে তৈরী করে তার ধর্ম, তার সমাজ, তার পরিবেশ, তার কৃষ্টি। এদের থেকে বিচ্ছিন্ন করা কি সামান্য ব্যাপার? এবং সাধারণতঃ সেটি কি সম্পূর্ণরূপে সম্ভব?”

এই কথাগুলি শুধু আংশিক সত্য—সম্পূর্ণ সত্য নয়। কারণ, এটুকু মোটামুটি জেনে রাখা দরকার যে মানুষ যখন সাহিত্যরচনায় নিবিষ্ট-চিত্ত তখন সে ঠিক হিন্দুও নয়, মুসলিমও নয়। তখন সে তার সর্বজনপরিচিত, 'আমি'টাকে বহু দূরে অতিক্রম করে যায়, নইলে তার সাহিত্যসাধনা ব্যর্থ হয়। এই জন্যেই যেখানে কিছুই এক নয়, বাহ্যতঃ কিছুই মেলে না, সেখানেও ম্যাক্সিম গর্কির মত সাহিত্য-সেবকেরা আমাদের বুকের মধ্যে অনেকখানি আত্মীয়ের আসন-জুড়ে বসে থাকেন। এই কথাটি আমি সকল সাহিত্যিককেই মনে রাখতে বলি। কে কোথায় তার অসতর্ক মুহূর্তে কি কথা বলেছে, সেইটিই তার জীবনের পরম সত্য নয়। কেবল তাই দিয়েই বিচার করা চলে না। এবং এই জন্যই ওয়াজেদ আলী সাহেব তাঁর প্রবন্ধে আমার সম্বন্ধে যে-সব কঠিন উক্তি করেছেন আমি তার জবাব দিতে বসবো না। রাগ যখন পড়বে, তখন আপনিই মনে হবে আমি সত্যি কথাই বলেছিলাম। ওয়াজেদ আলী সাহেব সবচেয়ে মর্মান্তিক কথা বলেছেন এইখানে, “বস্তুতঃ, দুইটি বিষম অনাত্মীয় কৃষ্টির সংঘর্ষের ফলে এই বিক্ষোভ। এর জন্য আক্ষেপ বৃথা। হিন্দু মুসলিমকে বোঝে না, এজন্যে দুঃখের বিলাপ আজ চারিদিকে ধ্বনিত হচ্ছে।