এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

পুস্তকাকারে অপ্রকাশিত রচনা  :  মুসলিম সাহিত্য-সমাজ         
পরিচ্ছেদ: / 1
পৃষ্ঠা: / 9
মেয়ে কেঁদে উঠলো। জ্বরগ্রস্ত, পিপাসায় শুষ্ককণ্ঠ গফুর ঘর থেকে বেরিয়ে এলো—এ দৃশ্য তার সইলো না। হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে যা সুমুখে পেলে—একখণ্ড কাঠ দিয়ে সবলে মহেশের মাথায় মেরে বসলো। অনশনে মৃতকল্প গরুটা বার-দুই হাত-পা ছুঁড়ে প্রাণত্যাগ করলে।

প্রতিবাসীরা এসে বললে, হিন্দুর গাঁয়ে গোহত্যা! জমিদার পাঠিয়েছেন তর্করত্নের কাছে প্রায়শ্চিত্তের ব্যবস্থা নিতে। এবার তোর ঘরদোর না বেচতে হয়। গফুর দুই হাঁটুর ওপর মুখ রেখে নিঃশব্দে বসে রইলো। মহেশের শোকে, অনুশোচনায় তার বুকের ভেতরটা পুড়ে যাচ্ছিলো। অনেক রাতে গফুর মেয়েকে তুলে বললে, চল্‌ আমরা যাই।

মেয়ে দাওয়ায় ঘুমিয়ে পড়েছিল, চোখ মুছে বললে, কোথায় বাবা? গফুর বললে, ফুলবেড়ের চটকলে কাজ করতে।

আমিনা আশ্চর্য হয়ে চেয়ে রইলো। ইতিপূর্বে অনেক দুঃখেও তার বাবা চটকলে কাজ করতে রাজী হয়নি। বাবা বলতো, ওখানে ধর্ম থাকে না, মেয়েদের আব্রু-ইজ্জত থাকে না—ওখানে কখন নয়। কিন্তু হঠাৎ এ কি কথা?

গফুর বললে, দেরি করিস নে মা, চল্‌। অনেক পথ হাঁটতে হবে। আমিনা জল খাবার পাত্র এবং বাবার ভাত খাবার পিতলের বাসনটি সঙ্গে নিতেছিল, কিন্তু বাবা বারণ করে বললে, ও-সব থাক্‌ মা, ওতে আমার মহেশের প্রাচিত্তির হবে।

তার পরে গল্পের উপসংহারে বইয়ে এইরূপ আছে—“অন্ধকার গভীর নিশীথে সে মেয়ের হাত ধরিয়া বাহির হইল। এ গ্রামে আত্মীয় কেহ তাহার ছিল না, কাহাকেও বলিবার কিছু নাই। আঙ্গিনা পার হইয়া পথের ধারে সেই বাবলা-তলায় আসিয়া সে থমকিয়া দাঁড়াইয়া হুহু করিয়া কাঁদিয়া উঠিল। নক্ষত্রখচিত কালো আকাশে মুখ তুলিয়া বলিল, আল্লাহ! আমাকে যত খুশি সাজা দিয়ো, কিন্তু মহেশ আমার তেষ্টা নিয়ে মরেছে। তার চরে খাবার এতটুকু জমি কেউ রাখেনি। যে তোমার দেওয়া মাঠের ঘাস, তোমার দেওয়া তেষ্টার জল তাকে খেতে দেয়নি, তার কসুর তুমি কখনো যেন মাফ্‌ করো না।”

এই হল গোহত্যা! এই পড়ে হিন্দুর ছেলের বুকে শেল বিঁধবে। তার চেয়ে পড়ুক ‘প্রেমের ঠাকুর’! তাতে ইহলোক না হোক তাদের পরলোকে সদ্গতি হবে! এই কান্তিমান সুপরিপুষ্ট প্রেমের ঠাকুরটিকে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে, মুসলমান-সম্পাদিত কাগজে এই গল্পটির যে কড়া আলোচনা বেরিয়েছিল তার কি কোন হেতু নেই? একেবারে মিথ্যা অমূলক?