এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

পুস্তকাকারে অপ্রকাশিত রচনা  :  রসচক্র         
পরিচ্ছেদ: / 1
পৃষ্ঠা: / 7
সম্মুখে বজ্রাঘাত হইলেও বোধ করি ভাইয়েরা অধিক চমকিত হইতেন না। বিভূতি ভয়ে পাংশু হইয়া উঠিল, শিবরতন বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হইয়া বলিয়া উঠিলেন, ন-বৌমা! একি কখনো হতে পারে মা?

মা তেমনি রোদন-বিকৃতকণ্ঠে কহিলেন, হয়েও কাজ নেই বাবা, ও যে ন-বৌ !

বড়লোকের মেয়ে ! তা যাই হোক, যখন গুরুর নাম নিয়ে দিব্যি করেচি, তখন বাড়িতে রেখে বুড়ো মাকে আর মেরো না বাবা, আজই কাশী পাঠিয়ে দাও। যাই তাঁদের চরণেই আশ্রয় নিই গে।

দেখিতে দেখিতে ছেলেমেয়ে দাসী-চাকরে প্রায় ভিড় হইয়া উঠিয়াছিল, শিবরতন তাঁর ছোটমেয়ে গিরিবালার প্রতি চাহিয়া কহিলেন, কি হয়েচে রে, গিরি, তুই জানিস?

গিরিবালা মাথা নাড়িয়া বলিল, জানি বাবা!—এই বলিয়া সে সাণ্ডেলদের সরায় সন্দেশ কম হইবার বিবরণ সবিস্তারে বিবৃত করিয়া কহিল, ঠাকুরমা ন-খুড়ীমাকে বড্ড গালাগালি দিচ্ছিলেন, বাবা।

শিবরতন কহিলেন, তার পর?

মেয়ে বলিল, ন-খুড়ীমা মুখ বুজে ঝাঁট দিচ্ছিলেন, সুমুখে ন-কাকার জুতোজোড়াটা ছিল, তাই পা দিয়ে শুধু ফেলে দিয়েছিলেন।

শিবরতন প্রশ্ন করিলেন, তার পরে?

গিরি কহিল, এক পাটি জুতো ছিটকে এসে ঠাকুরমার পায়ের কাছে পড়েছিল।

শিবরতন শুধু কহিলেন, হুঁ! মায়ের প্রতি চাহিয়া বলিলেন, ভেতরে যাও মা! এর বিচার যদি না হয়, ত তখন কাশীতেই চলে যেয়ো।

একে একে ধীরে ধীরে সবাই প্রস্থান করিল, শুধু কেবল তিন ভাই সেইখানে স্তব্ধ হইয়া বসিয়া রহিলেন। ভৃত্য তামাক দিয়া গেল, কিন্তু সে শুধু পুড়িতেই লাগিল, শিবরতন স্পর্শ করিলেন না, প্রায় আধ-ঘণ্টাকাল এইভাবে নিঃশব্দে বসিয়া থাকিয়া অবশেষে মুখ তুলিয়া বলিলেন, বিভূতি?

বিভূতি সসম্ভ্রমে কহিল, আজ্ঞে?

শিবরতন বলিলেন, তোমার স্ত্রীর শাস্তি তুমি ছাড়া আর কারও দেবার অধিকার নেই।

বিভূতি আশঙ্কায় পরিপূর্ণ হইয়া ক্ষীণকণ্ঠে বলিল, আজ্ঞা করুন।

শিবরতন বলিলেন, ঐ জুতো তোমার স্ত্রীর মাথায় তুমি তুলে দেবে। উঠানের মাঝখানে তিনি মাথায় নিয়ে সমস্ত বেলা দাঁড়িয়ে থাকবেন। তোমার উপর এই আমার আদেশ।