এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

পুস্তকাকারে অপ্রকাশিত রচনা  :  রসচক্র         
পরিচ্ছেদ: / 1
পৃষ্ঠা: / 7
তখন হইতে ছত্রিশ ঘণ্টা কাটিয়া গেছে,—মালা-আহ্নিকের যথেষ্ট বিঘ্ন ঘটিয়াছে, কিন্তু আলোচনার শেষ হইতে পায় নাই। দোষ শুধু ন-বৌমার এ বিষয়েও যেমন কাহারও সংশয় ছিল না, এবং নিজে সে বড়লোকের মেয়ে বলিয়াই ইচ্ছা করিয়া দরিদ্র পরিবারের অপমান করিয়াছে, ইহাতেও তেমনি কাহারও সন্দেহ ছিল না। ন-বৌ যে সকল কথাই নীরবে সহ্য করিয়া যাইত তাহা নয়,—মাঝে মাঝে সেও উত্তর দিত; কিন্তু তাহার কোন উত্তরটাই সোজা শাশুড়ির কানে পৌঁছিত না, পৌঁছিত প্রতিধ্বনিত হইয়া। তাই তাহার বক্তব্যটা লোকের মুখে মুখে ঘা খাইয়া কেবল বিকৃতই হইত না, তাহার রেশটাও সহজে মিলাইতে চাইত না। সকালে আজ বাটীর মধ্যে যখন এই অবস্থা,—সান্যাল-পরিবারের মিষ্টান্নের ন্যূনতা লইয়া ন-বধূর সম্বন্ধে আলোচনা যখন তুমুল হইয়া উঠিয়াছে, বাহিরে তখন শিবরতন সেই ন-বধূমাতারই প্রশংসায় মুক্তকণ্ঠ হইয়া উঠিয়াছিলেন।

শিবরতন কহিলেন, বুধবারে ন-বৌমাকেও সঙ্গে নিয়ে যাও। মা আমার আরও কিছুদিন এখানে থেকে যেতে পারলে যেখানে যা-সমস্ত গুছিয়ে-গাছিয়ে সারা বছরের জন্যে আমাকে নিশ্চিন্ত করে যেতে পারতেন, কেননা, এ-সকল কাজ আর কোন বৌয়ের দ্বারাই অমন শৃঙ্খলায় হয় না,—কিন্তু কি আর করা যাবে! নিয়ে গিয়ে দু-দশদিন তাঁর মায়ের কাছে দিয়ো, তবু বোনদের সঙ্গে দিন-কতক আনন্দে কাটাতে পারবেন। বিভূতি, তোমার বাসায় ত বিশেষ কোন অসুবিধা হবে না?

বিভূতি কহিল, আজ্ঞে না, অসুবিধা কিছুই হবে না।

শিবরতন বলিলেন, বেশ তাই করো। ন-বৌমা বাড়ি ছেড়ে যাবেন মনে হলেও আমার বিজয়ার দুঃখ যেন বেশী করে উথলে ওঠে,—কিন্তু কি আর করা যাবে! সবই মহামায়ার ইচ্ছা। সারা বছর সবাইকে নিয়ে সংসার করা—বলিয়া তিনি একটা দীর্ঘ-নিঃশ্বাস চাপিয়া ফেলিয়া বোধ করি আরও কি একটু বলিতে যাইতেছিলেন, কিন্তু অকস্মাৎ উপস্থিত সকলেই একেবারে চমকিত হইয়া উঠিলেন।

বৃদ্ধা জননী কাঁদিতে কাঁদিতে একেবারে প্রাঙ্গণের মাঝখানে আসিয়া দাঁড়াইয়াছিলেন। শিবরতন শশব্যস্তে হুঁকা রাখিয়া উঠিয়া দাঁড়াইলেন, শম্ভু এবং বিভূতি তাহারাও অগ্রজের সঙ্গে দাঁড়াইয়া উঠিল, মা কাঁদিতে কাঁদিতে বলিলেন—শিবু, আমার গুরু দিব্যি রইল, তোদের বাড়িতে আর আমি জলগ্রহণ করব না, যদি না এর বিচার করিস। ন-বৌ বড়লোকের বেটী, আজ আমাকে জুতো ছুঁড়ে মেরেছে!