এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

পুস্তকাকারে অপ্রকাশিত রচনা  :  জাগরণ         
পরিচ্ছেদ: / 9
পৃষ্ঠা: / 64
অমরনাথ এই শিক্ষিতা মেয়েটির নিরভিমান সরলতায় মনে মনে অত্যন্ত প্রীত হইয়া কহিলেন—অনাহূত আমার পাঠশালায় এসেই কিন্তু চলে যেতে আপনি পাবেন না। দরিদ্র ব্রাহ্মণের কুটীরেও একবার আপনাকে যেতে হবে। সেখানে আমার মা আছেন, দিদি আছেন, ছোটবোন শ্বশুরবাড়ি থেকে এসেছেন। তাঁদের দেখা না দিয়ে আপনি যাবেন কি করে? চলুন।
ইন্দু তৎক্ষণাৎ সম্মত হইয়া কহিল—চলুন। কিন্তু সন্ধ্যা হতে ত দেরি নেই, কাকাবাবু যে ব্যস্ত হবেন?
অমরনাথ সহাস্যে কহিলেন—ব্যস্ত হবেন না। কারণ, তাঁকে খবর দিতে লোক গেছে।
টোল-ঘরের পিছন হইতেই বাগান শুরু হইয়াছে। একটা মস্ত বড় পুকুর, তাহার চারিধারে কত যে ফুলগাছ এবং কত যে ফুল ফুটিয়া আছে, তাহার সংখ্যা নাই। অমরনাথের পিছনে সদর-বাটীতে প্রবেশ করিয়া ইন্দু দেখিল, প্রশস্ত চণ্ডীমণ্ডপের একধারে দিনান্তের শেষ আলোকে বসিয়া জন-দুই ছাত্র তখনও পুঁথি লিখিতেছে, অন্যধারে পাঁচ-সাতটি চিক্কণ পরিপুষ্ট সবৎসা গাভী ভূরিভোজনে নিযুক্ত, একটা মস্ত বড় কালো কুকুর একমনে তাহাই নিরীক্ষণ করিতেছিল, অভ্যাগত দেখিয়া সসম্ভ্রমে উঠিয়া দাঁড়াইয়া ল্যাজ নাড়িয়া অভ্যর্থনা করিল। সমস্ত পূর্বদিকটা বড় বড় ধানের মরাই গৃহস্থের সৌভাগ্য সূচিত করিতেছে; একটা জবার গাছ ফুলে ফুলে একেবারে রাঙ্গা হইয়া উঠিয়াছে। ইন্দু ভাল করিয়া সমস্ত পর্যবেক্ষণ করিয়া অন্দরে প্রবেশ করিল।
মাটির বাড়ি। আট-দশটি উচ্চ প্রশস্ত ঘর। প্রাঙ্গণ এমন করিয়াই নিকানো যে, জুতা পায়ে দিয়া প্রবেশ করিতে ইন্দুর যেন গায়ে লাগিল। সেইমাত্র সন্ধ্যা হইয়াছে, ধূপধুনা ও গুগ্‌গুলের গন্ধে সমস্ত গৃহ যেন পরিপূর্ণ হইয়া উঠিয়াছে।
অমরনাথের বিধবা দিদি ঠাকুরঘরে ব্যস্ত ছিলেন, কিন্তু খবর পাইয়া তাহার মা আসিয়া উপস্থিত হইলেন। ছোটবোন ছেলে কোলে করিয়া আসিয়া দাঁড়াইল। ইন্দু অমরনাথের জননীকে প্রণাম করিল। তিনি হাত দিয়া তাহার চিবুক স্পর্শ করিয়া চুম্বন করিলেন এবং যে দুই-চারিটি কথা উচ্চারণ করিলেন, তাহাতে ইন্দুর মনে হইল, এত বড় আদর ইহজীবনে আর কখনও সে পায় নাই। দাওয়ার উপরে বসিতে তিনি স্বহস্তে আসন পাতিয়া দিলেন।
ইন্দু উপবেশন করিলে অমরের জননী কহিলেন—গরীবের ঘরে ঠিক সন্ধ্যার সময় আজ মা কমলা এলেন।