এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

পুস্তকাকারে অপ্রকাশিত রচনা  :  জাগরণ         
পরিচ্ছেদ: / 9
পৃষ্ঠা: / 64
নয়

মাঠের ধার দিয়া চলন-পথ বরাবর বরাট গ্রামে গিয়ে পৌঁছিয়াছে, কাহাকেও জিজ্ঞাসা না করিয়াও ইন্দু সোজা গিয়া গ্রামের তেমাথায় উপস্থিত হইল। বিরাট একটা বটবৃক্ষের ছায়ায় অমরনাথের চতুষ্পাঠী, দশ-বারোজন ছাত্রপরিবৃত হইয়া তিনি ন্যায়ের অধ্যাপনায় নিযুক্ত, এমনি সময় ইন্দু গিয়া তাঁহার সম্মুখে দাঁড়াইল। অতি বিস্ময়ে প্রথমে অমরনাথের বাক্যস্ফূর্তি হইল না, কিন্তু পরক্ষণে সশিষ্য গাত্রোত্থান করিয়া বহুমানে সংবর্ধনা করিয়া কহিলেন—একি আমার পরম ভাগ্য! আর সকলে কোথায়?

একজন ছাত্র আসন আনিয়া দিল। অনভ্যাসবশতঃ ইন্দুর প্রথমে মনে পড়ে নাই, সে আর একবার নীচে নামিয়া গিয়া, জুতা খুলিয়া রাখিয়া আসনে আসিয়া উপবেশন করিয়া কহিল—আমি একাই এসেছি, আমার সঙ্গে কেউ নেই।

কথাটা বোধ হয় অমরনাথ ঠিক প্রত্যয় করিতে পারিলেন না, স্মিতমুখে নিঃশব্দে চাহিয়া রহিলেন।

ইন্দু কহিল—কাকাবাবুর সঙ্গে আমি বেড়াতে বার হয়েছিলাম। তিনি তাঁর এক পীড়িত বন্ধুকে দেখতে গেলেন। আমাকে বললেন, আপনাকে খবর দিতে, যদি পারেন, কাল একবার দেখা করবেন।
অমরনাথ কহিলেন—খবর দেবার জন্য ত জমিদারের লোকের অভাব নেই। কিন্তু এই যদি যথার্থ হয় ত বলতেই হবে এ আমার কোন্‌ অজানা পুণ্যের ফল। কিন্তু কার বাড়িতে রায়-মশায় এসেছেন শুনি?
ইন্দু কহিল—আমি ত তাঁর নাম জানিনে, শুধু বাড়িটা চিনি। কিন্তু আপনার নিজের বাড়ি এখান থেকে কতদূরে অমরনাথবাবু?
অমরনাথ কহিলেন—মিনিট দুয়ের পথ।
—আমাকে তা হলে একটু খাবার জল আনিয়ে দিন।
একজন ছাত্র ছুটিয়া চলিয়া গেল এবং ক্ষণকাল পরেই সাদা পাথরের রেকাবিতে করিয়া খানিকটা ছানা এবং গুড় এবং তেমনি শুভ্র পাথরের পাত্রে শীতল জল আনিয়া উপস্থিত করিল। প্রয়োজন নাই বলিয়া ইন্দু প্রত্যাখ্যান করিল না, ছানা ও গুড় নিঃশেষ করিয়া আহার করিল এবং জলপান করিয়া কহিল—এখন তা হলে আমি উঠি?