এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

পুস্তকাকারে অপ্রকাশিত রচনা  :  সত্য ও মিথ্যা         
পরিচ্ছেদ: / 2
পৃষ্ঠা: / 6
স্বর্গীয় গ্রন্থাকারের বোধ করি ইচ্ছা ছিল, সে-সময়ে বাঙ্গালাদেশে ইংরাজ নীলকরের দ্বারা যে-সকল অত্যাচার ও অনাচার অনুষ্ঠিত হইত, তাহারই একটু আভাস দেওয়া। ইহারই অভিনয় ক্লাস হেট্‌রেড জাগিতে পারে, রাজশক্তির ইহাই আশঙ্কা। আশঙ্কা অমূলক বা সমূলক, এ আমার আলোচ্য নয়, কিংবা ইংরাজ নামের পরিবর্তে পর্তুগীজ নাম বসাইলে ক্লাস হেট্‌রেড বাঁচে কিনা সেও আমি জানি না,—ইংরাজের আইনে বাঁচিলেও বাঁচিতে পারে—কিন্তু যে আইন ইহারও উপরে, যাহাতে ‘ক্লাস’ বলিয়া কোন বস্তু নাই, তাহার নিরপেক্ষ বিচারে একের অপরাধ অপরের স্কন্ধে আরোপ করিলে যে বস্তু মরে, তাহার দাম ক্লাস হেট্‌রেডেরও অনেক বেশী। সেদিন দেখিলাম, এই ছোট ফাঁকিটুকু হইতে ছোটছেলেরাও অব্যাহতি পায় নাই। তাহাদের সামান্য পাঠ্যপুস্তকেও এই অসত্য স্থান লাভ করিয়াছে। নূতন গ্রন্থকার আমার মতামত জানিতে আসিয়াছিলেন। জিজ্ঞাসা করিলাম—এই আশ্চর্য নামটি আপনি সংগ্রহ করিলেন কিরূপে? গ্রন্থকার সলজ্জে কহিলেন—‘‘প্রাণের দায়ে করিতে হয়, মশাই! জানি সব, কিন্তু গরীব, পয়সা খরচা করিয়া বই ছাপাইয়াছি, তাই ওই ফন্দিটুকু না করিলে কোন স্কুলে এ বই চলিবে না।’’

তাঁহাকে আর কিছু বলিতে প্রবৃত্তি হইল না, কিন্তু মনে মনে নিজের কপালে করাঘাত করিয়া কহিলাম—যে-রাজ্যের শাসনতন্ত্রে সত্য নিন্দিত, যে-দেশের গ্রন্থকারকে জানিয়াও মিথ্যা লিখিতে হয়,—লিখিয়াও ভয়ে কণ্টকিত হইতে হয়, সে-দেশে মানুষে গ্রন্থকার হইতে চায় কেন? সে-দেশের অসত্য-সাহিত্য রসাতলে ডুবিয়া যাক না! সত্যহীন দেশের সাহিত্যে তাই আজ শক্তি নাই, গতি নাই, প্রাণ নাই। তাই আজ সাহিত্যের নাম দিয়া দেশে কেবল ঝুড়ি ঝুড়ি আবর্জনার সৃষ্টি হইতেছে। তাই আজ দেশের রঙ্গমঞ্চ ভদ্র-পরিত্যক্ত, পঙ্গু, অকর্মণ্য। সে না দেয় আনন্দ, না দেয় শিক্ষা। দেশের রক্তের সঙ্গে তাহার যোগ নাই, প্রাণের সঙ্গে পরিচয় নাই, দেশের আশা-ভরসার সে কেহ নয়—সে যেন, কোন্‌ অতীত যুগের মৃতদেহ। তাই পাঁচ শত বছর পূর্বে কবে কোন্‌ মোগল পাঠানকে জব্দ করিয়াছিল এবং কখন্‌ কোন্‌ সুযোগে মারহাট্টা রাজপুতকে মারিয়াছিল, সে শুধু ইহারই সাক্ষী, এ ছাড়া তাহার দেশের কাছে বলিবার আর কিছু নাই।