এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

পুস্তকাকারে অপ্রকাশিত রচনা  :  আসার আশায়         
পরিচ্ছেদ: / 1
পৃষ্ঠা: / 4
রাজা হেসে বললেন, “মা, কি তোমার নাম?”—আমি ত লজ্জায় মরে গেলাম। ঘাড় গুঁজে দাঁড়িয়ে বাঁ-পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে মাটি খুঁড়তে লাগলাম। নাম মনে এল না। কানের মধ্যে ঝাঁঝাঁ করতে লাগল। নাকের উপর বিন্‌কি বিন্‌কি ঘাম দেখা দিলে।

রাজা বললেন, “কি শান্ত—কি লক্ষণ—কি শ্রী—এ যে শুধু আমার ঘরেরই উপযুক্ত!” সেদিন থেকে চারদিকে কানাঘুষো পড়ে গেল। আমার মনের মধ্যে ছটফটানি ধরল। কৈ, রাজার খবর আসে না কেন? হায় পোড়াকপালী!—শেষে তোর সাধ মিটল!

যখন ডাক পড়ল, তখন একেবারে চুলের মুটি ধরে। আর সবুর সইল না। জানিনে, কবে কোন্‌ ফাঁকে কুমার আমাকে দেখে নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে বসলেন।

পাঁজিপুঁথি ধরে গোণক্কার বিয়ের দিন ঠিক করেছেন,—শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমেতে।

কি জল, কি ঝড় সে রাতে! সত্যি বলছি—সে বাতাসে বিয়ের মন্তরগুলো সব উড়ে গেল। শুধু আমরা দু'জনে দু'জনকে দেখলাম মাত্র—একটিবার! তার পর ঝড়ে সব বাতি নিবে গেল—আমাদের গলার যুঁই-এর গোড়ে ছিঁড়েখুড়ে খণ্ড খণ্ড হয়ে কোথায় উড়ে চলে গেল।

আমি কুমারের বুকের কাছে জড়সড় হয়ে বললুম, “ওগো, আমার যে বড় ভয় করেছে” তিনি মুখের কাছে মুখ এনে বললেন, “আরো সরে এস—আমার এই বুকের মধ্যে।”

আমি কাঁপতে কাঁপতে—ঝড়ের মধ্যে পাখির ছানা যেমন তার নীড়ের মধ্যে ঘুমোয়,—তেমনি করে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালে ঘুম-ভেঙ্গে দেখি, কৈ রাজকুমার,—এ যে আমাদের বুড়ো ঝির বুকের মধ্য রয়েছি।

তার মুখের দিকে চেয়ে দেখলাম, দু’চোখ বেয়ে তার জল পড়ছে। কথা কইতে সাহস হল না।

দেখলাম, বাইরে মেঘ থেকে অজস্র জল পড়ছে—দেখলাম, বাড়ির সকলের চোখ থেকে জল গড়াচ্ছে। গাছের মধ্যে দিয়ে সোঁ সোঁ করে বাতাস বইছে।