ইহাদিগকেই অন্যত্র দাসরূপে বিক্রয় করিয়া অর্থ অর্জন করিত। বাস্তবিক, এমন অন্যায়, এমন অধর্ম, এমন নিষ্ঠুরতা ছিল না, যাহা এই ফিনীসিয়রা না করিত। দিনে যাহারা অতিথি হইত, রাত্রে তাহাদের গলাতেই ছুরি দিত। এ-সব ইতিহাসের প্রমাণ-করা কথা। অনুমান বা কল্পনা নহে। এমন জাতির জ্ঞাতি হইয়াও উড়িষ্যার কন্দকাটারা এত বড় ধার্মিক হইল কিরূপে? এবং এই ফিনীসিয় শরীররক্ষী উড়িয়াই বা এমন যুধিষ্ঠির হইলেন কি মনে করিয়া? ঋতেন্দ্রবাবু যদি এতটুকু বৈজ্ঞানিক বিচারপদ্ধতি অবলম্বন করিতেন, তাহা হইলে দেখিতে পাইতেন, ফিনীসিয়রা বা কানানাইটরা উড়িষ্যার খোন্দ জাতি হইলে নৈতিক চরিত্রে এমন আকাশ-পাতাল ব্যবধান হইত না। ইহার পরে তিনি রথের প্রসঙ্গ তুলিয়া বলিয়াছেন, “ইস্রেলরাজ [সলোমন] যে-সকল বিষয়ে কলিঙ্গবাসীদের অনুসরণ করিয়াছিলেন, তন্মধ্যে রথ ও মন্দিরাদি নির্মাণই প্রধান উল্লেখযোগ্য।... কলিঙ্গবাসীরা চিরদিন রথের আড়ম্বরে আকৃষ্ট, রথের ধুমধাম, রথের জাঁকজমক কলিঙ্গের চারিদিকে।...সলোমনের এক সহস্র চারি শত রথ নির্মিত হইয়াছিল।” হয় নাই এ কথা কেহ বলে না। রাজা সলোমন অনেকগুলি লড়াই করিবার রথ প্রস্তুত করাইয়াছিলেন। ঋতেন্দ্রবাবু বলিয়াছেন, কলিঙ্গসন্তানেরা সেগুলি গড়িয়া দিয়াছিল। তাহা হইতে পারে এবং না হইতেও পারে। হইতে পারে এইজন্য যে, ঠাকুরমহাশয়ের নিশ্চিত বিশ্বাস হইয়াছে যে, ফিনীসিয়রা উড়ে-দেশের লোক। উড়ে-দেশের জগন্নাথের রথ আছে, সুতরাং তাহারাই সলোমনের রথ তৈরি করিয়াছিল। আমার বিশ্বাস হয় না যে এইজন্য যে, একে ত ফিনীসিয়রা উড়ে নয়, তা ছাড়া রথ গড়িবার লোক আরও আছে। সলোমনের সময়ে, অর্থাৎ যীশুখ্রিস্টের হাজার বৎসর পূর্বে কলিঙ্গে রথের ধুমধাম কিরূপ ছিল এবং তাহারা কিরূপ রথ তৈরি করিতে পারিত, আমার তাহা জানা নাই। দ্বিতীয় কারণ, রাজা সলোমনের প্রতিবাসী মিশরীয়েরা বহু পূর্ব হইতে সুন্দর এবং মজবুত রথ করিবার জন্য বিখ্যাত ছিল। তাহাদিগের রথাদি কিরূপে তৈরি হইত, তাহা দ্বিবিধ কি ত্রিবিধ, কি কাঠের চাকা তৈরি হইত, সারথিরা কি কি জায়গীর প্রাপ্ত হইত, রথ চালানো তাহাদিগকে জিমন্যাস্টিকের মত কিরূপে রীতিমত অভ্যাস করিতে হইত, ইত্যাদি অনেক কথা বাল্যকালে মিশরের ইতিহাসে পড়িয়াছি। তাহা মনে নাই। মনে রাখিবার আবশ্যকও তখন দেখি নাই। কিন্তু এটা মনে আছে যে, প্রাচীন মিশরীয়েরা চমৎকার রথ গড়িতে পারিত। এবং ইহাও মনে হইতেছে, কিছুদিন পূর্বে Struggle of the Nations পুস্তকের দ্বিতীয় কি তৃতীয় অধ্যায়ে দেখিয়াছি, একজন আসীরিয় রাজা ফারাওর (মিশরের রাজা) নিকট পরাজিত হইয়া এই বলিয়া দুঃখ করিয়াছিল, “যদি উহাদের মত লড়াই করিবার রথ থাকিত, তাহা হইলে এ দুর্দশা ঘটিত না।”