এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

পুস্তকাকারে অপ্রকাশিত রচনা  :  নারীর লেখা         
পরিচ্ছেদ: / 1
পৃষ্ঠা: / 12
এ-ছাড়া সংস্কৃত, হিন্দী, ইংরেজী—কালিদাস, সেক্সপিয়র, টেনিসন—যাহা কিছু শিক্ষা করা প্রয়োজন একাধারে সমস্তই। বলিতে পারি না, শেষের দিকে রাজাভাষা এবং Clerk's Guide আছে কিনা। আমার ছোট নাতিটিকে একখানি কিনিয়া দিব মনে করিতেছি।

যদি আমার রাধারানীর কথা সত্য হয়, তবে, আর গোট-দুই প্রশ্ন করিয়াই ক্ষান্ত হইব। জিজ্ঞাসা করি, এত বাড়াবাড়ি ধর্মচর্চা কেন? হিন্দু ধর্মের অত সূক্ষ্ম ভেদগুলি না হয়, নাই দেখান হইত—তাহাতে এমনিই কি ক্ষতি ছিল! এ যে সন্ন্যাসী ফকিরের ভিড়ে পা বাড়াইবার জো নাই, কোথায় দাঁড়াই, কোন্ দিকে চলি, কোন্ মহাত্মার গায়ে এই বুঝি পা দিয়া ফেলি, এই ভেবেই যে সারা হইতে হয়। তার উপর ইংরেজির বুকনি ও ইংরেজি কবিতার লম্বা কোটেশন! এ কথাও ভাবা উচিত ছিল, এটা বাংলা উপন্যাস এবং তাঁহার অধিকাংশ ভগিনীগুলিই ইংরেজি জানেন না। জানি বলিয়া কি তাহা জানাইতেই হইবে! শুনিয়াছি, রবিবাবুও ইংরেজি জানেন, বঙ্কিমবাবুও নাকি শিখিয়াছিলেন, কিন্তু তাঁহারাও নভেলের মধ্যে লোভ সংবরণ করিতে পারিয়াছিলেন! এ-ক্ষেত্রেও লোভ সামলান উচিত ছিল। অন্তঃপুরচারিণী স্ত্রীলোক হইয়াও সর্বতোমুখী পাণ্ডিত্যের বহরে লোকজনের তাক্ লাগাইয়া দিব, এই স্পিরিট্‌টাই নিন্দার্হ। অগ্রহায়ণের 'ভারতী'তে এক ভদ্রলোক এই বইখানি সমালোচনা করিয়া একস্থানে বলিয়াছেন, স্থানে-অস্থানে অত্যধিক প্রকৃতি-বর্ণনা এবং তাহাতে রসভঙ্গ না কি এমনি একটা দোষ ঘটিয়াছে। আমি কিন্তু এ কথা বলি না। বরং বলি, দুই-তিন পাতা জোড়া প্রকৃতি-বর্ণনা পড়িয়া যে ব্যক্তি একটা কিছু আইডিয়া করিতে চায় সে-ই অরসিক। এ জিনিসটা গয়ায় পিণ্ডি দেবার মত। পুরোহিত ঠাকুরও জানে না, কি বলাইতেছি; যজমানও গ্রাহ্য করে না, কি বলিতেছি! অথচ, উভয়েই জানে কাজ হইতেছে—ভূত ছাড়িতেছে! এ-বিষয়ে শ্রদ্ধা থাকা চাই, বিশ্বাস থাকা চাই; প্রকৃতি-বর্ণনা বুঝিতেছি। ভেলকি-খেলা দেখেন নাই? খেলওয়াড় চোখের ভিতর হইতে হাঁসের ডিম বাহির করিবার আগে হাত-পা নাড়িয়া ভানুমতীর ব্যাখ্যা শুরু করিয়া দেয়—এ তেমনি। বোঝা উচিত, এবার আশ্চর্য কিছু-একটা আসিতেছে। যে সমঝদার সেই জানে এইবার ডিম বাহির হইবে—বোকায় শুধু হাত-পা নাড়া দেখিতেই ব্যস্ত থাকে এবং ভানুমতী ব্যাখ্যার মানে বুঝিতে চায়। আমি ত ৩০ অধ্যায়ের গোড়াতেই বুঝিয়াছিলাম, এবার নতুন কিছু একটা আছে।

লেখিকা লোক-হিতার্থে দয়া করিয়া পেট কামড়ানির মন্ত্র পর্যন্ত শিখাইয়া দিয়াছেন।