এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

অজ্ঞাত রচনা  :  একটি অসমাপ্ত গল্প         
পরিচ্ছেদ: / 1
পৃষ্ঠা: / 4
কেন মা?

জ্যাঠাইমা এতক্ষণ আমার মায়ের সঙ্গে বসে কত গল্প কচ্চেন না?

গোবিন্দ হঠাৎ প্রশ্নটা বুঝিতে না পারিয়া মুখপানে চাহিয়া রহিলেন।

সুরমা কহিল, জ্যাঠাইমা বলতেন, সবাই স্বর্গে গেলে আবার দেখা হয়। আচ্ছা, আমার ত মাকে মনে পড়ে না, আমি কেমন করে চিনে নেব?

গোবিন্দ আগ্রহভরে উঠিয়া বসিয়া বলিলেন, হ্যাঁ সুরমা, তোর জ্যাঠাইমা বুঝি এই সব বলতেন? আচ্ছা, তোদের দুজনের কি কি কথা হত আমাকে সব খুলে বল ত মা।

তখন সুরমা একটি একটি করিয়া স্মরণ করিয়া বলিতে লাগিল। তিনি সুদীর্ঘ রোগশয্যায় শুইয়া জীবনের আশা ত্যাগ করিয়া কতদিন কত উপলক্ষে কত কথাই না এই মেয়েটিকে বলিয়াছিলেন। মরণের পর সুস্থ সবল দেহের কথা, পুনরায় দেখা-সাক্ষাতের কথা।

হাঁরে সুরো?

কেশব লাহিড়ী মাইনার ইস্কুলের হেডমাস্টার, বেতন ত্রিশ টাকা। এই গ্রামখানিতে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, সদরওয়ালা, বড় চাকুরে, জমিদার প্রভৃতি অনেক বড়লোকের বাস, তথাপি লাহিড়ীমশায়ের ন্যায় সম্মানিত ব্যক্তি বোধ করি আর কেহই ছিলেন না। এ সম্মান তাঁহার নিজের অর্জিত এবং একেবারে নিজস্ব। সেই জন্যই মনে হয় ছোট, বড়, ইতর, ভদ্র সবাই মান্য করিয়া চলিত।

আজ রবিবার, স্কুল ছিল না। অপরাহ্ণবেলায় তিনি বাহিরের উঠানে চাঁপাতলায় একখানি চৌকি পাতিয়া নিবিষ্টচিত্তে শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত পাঠ করিতেছিলেন। চোখের কোণ বাহিয়া জল ঝরিয়া পড়িয়াছিল, তাহাই মুছিবার জন্য ক্ষণকালের নিমিত্ত চশমাখানি নামাইয়া ধরিয়া চোখ মুছিতেছিলেন, হঠাৎ পিছন হইতে ডাক আসিল, ‘জ্যাঠামশাই?’

‘কেন মা?’

কমলা তাঁহার বড় আদরের ভ্রাতুষ্পুত্রী, বয়স দশ বৎসর। কাছে আসিয়া ঘাড় নাড়িয়া বলিল, ‘আচ্ছা, জ্যাঠামশাই, সাহেবরা ত এত পারে, তবে কেন দাঁড়কাকগুলোকে সব মেরে ফেলে না?’ কমলার অদ্ভুত প্রশ্নে কেশব হাসিলেন। বলিলেন, ‘সে খবর ত জানিনে মা। কিন্তু দাঁড়কাকগুলোর অপরাধ?’

কমলা অতিশয় গম্ভীর হইয়া বলিল, ‘বাঃ,—ওরা যে যমের বাহন, জ্যাঠামশাই। চিলেরা ছাতে বসে ডেকে ডেকে বাড়ি চিনিয়ে দেয়, তাই ত যমের দূত চিনতে পারে। নইলে কেউ ত মরত না, সবাই কেমন মজা করে বেঁচে থাকত, না জ্যাঠামশাই?’

কেশব হাসিতে লাগিলেন। শেষে জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘এ খবরটি কে তোমাকে দিলে মা?’

‘বউদি। সত্যি, না?’

কেশব মাথা নাড়িয়া বলিলেন, ‘ তোমার বউদির কথা হয়ত সত্যি নয় মা।’

কমলা আশ্চর্য হইয়া প্রশ্ন করিল, ‘সত্যি নয়?’ পরক্ষণেই একগোছা চুল কপালের একাংশ হইতে সরাইয়া দিয়া বার-দুই গ্রীবা আন্দোলিত করিয়া বলিল, ‘না জ্যাঠামশাই, সত্যি। নইলে ওরা ত দাঁড়কাক, তবে কেন ওদের ময়ূরের মত গলা চিকচিক করে?’

কেশব প্রথমে উচ্চ হাস্য করিয়া উঠিলেন, তারপর যথাসাধ্য গম্ভীর হইয়া বলিলেন, ‘কিন্তু মা, তোমার কালো পায়রাগুলোরও ত গলা চিকচিক করে।’