এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

নাটক  :  ষোড়শী         
পরিচ্ছেদ: / 4
পৃষ্ঠা: / 54
শ্রীজীবানন্দ চৌধুরী”

ফকির। (নির্মলের মুখের ভাব লক্ষ্য করিয়া) সংসারে কত বিস্ময়ই না আছে!

নির্মল। (দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিয়া, ঘাড় নাড়িয়া) হাঁ। কিন্তু এ যে সত্য তার প্রমাণ কি?

ফকির। সত্য না হলে এ দান নেবার জন্যে ষোড়শীকে কিছুতেই আনতে পারতাম না।

নির্মল। (ব্যগ্রকণ্ঠে) কিন্তু তিনি কি এসেচেন? কোথায় আছেন?

ফকির। আছেন আমার কুটীরে, নদীর পরপারে।

নির্মল। আমার যে এখনি একবার যাওয়া চাই ফকিরসাহেব।

ফকির। চলুন। (হাসিয়া) কিন্তু বেলা পড়ে এল, আবার না তাঁকে হাত ধরে রেখে যেতে হয়।

[উভয়ের প্রস্থান

[সহসা অন্তরাল হইতে কয়েকজনের সতর্ক, চাপা কোলাহলের মধ্য হইতে প্রফুল্লর কণ্ঠস্বর স্পষ্ট শোনা গেল—“সাবধানে! সাবধানে! দেখো যেন ধাক্কা না লাগে!” এবং পরক্ষণেই তাহারা ধরাধরি করিয়া জীবানন্দকে বহিয়া আনিয়া বিছানায় শোয়াইয়া দিল। তাঁহার চক্ষু মুদ্রিত। সঙ্গে প্রফুল্ল]

প্রফুল্ল। এখন কেমন মনে হচ্চে দাদা?

জীবানন্দ। ভালো না। আমি অজ্ঞান হয়ে সাঁকো থেকে পড়ে গিয়েছিলাম প্রফুল্ল?

প্রফুল্ল। না দাদা, আমরা ধরে ফেলেছিলাম। কতবার বলছি এ রুগ্নদেহে এত পরিশ্রম সইবে না, কিছুতে কান দিলেন না। কি সর্বনাশ করলেন বলুন ত?

জীবানন্দ। (চক্ষু মেলিয়া) সর্বনাশ কোথায় প্রফুল্ল, এই ত আমার পার হবার পাথেয়। এ ছাড়া এ জীবনে আর সম্বল ছিল কৈ?

[দ্রুতবেগে এককড়ি প্রবেশ করিল, তাহার হাতে একটা কাঁচের শিশি]

এককড়ি। (প্রফুল্লের প্রতি) এখ্‌খুনি হুজুরকে এটা খাইয়ে দিন। বল্লভ ডাক্তার দৌড়ে আসছে এলো বলে।

প্রফুল্ল। (শিশি হাতে লইয়া জীবানন্দের কাছে গিয়া) দাদা! এই ওষুধটুকু যে খেতে হবে।

জীবানন্দ। (চক্ষু মুদ্রিত) খেতে হবে? দাও। (ঔষধ পান করিয়া) কোথায় যেন ভয়ানক ব্যথা প্রফুল্ল, যেন এ ব্যথার আর সীমা নেই। উঃ—

প্রফুল্ল। (ব্যকুল-কণ্ঠে) এককড়ি, দেখ না একবার ডাক্তার কত দূরে—যাও না আর একবার ছুটে।

এককড়ি। ছুটেই যাচ্চি বাবু—

[দ্রুতপদে প্রস্থান

জীবানন্দ। ছুটোছুটিতে আর কি হবে প্রফুল্ল? মনে হচ্চে যেন আজ আর তোমরা ছুটে আমার নাগাল পাবে না।

প্রফুল্ল। (নিকটে হাঁটু গাড়িয়া বসিয়া) এমন ত কতবার হয়েছে, কতবার সেরে গেছে দাদা। আজ কেন এ-রকম ভাবছেন?

জীবানন্দ। ভাবছি? না প্রফুল্ল, ভাবিনি। (ঈষৎ হাসিয়া) অসুখ বহুবার হয়েছে এবং বহুবার সেরেছে সে ঠিক। কিন্তু এবার যে আর কিছুতেই সারবে না সেও ত এমনিই ঠিক প্রফুল্ল।

[এককড়ি ও বল্লভ ডাক্তারের প্রবেশ]

প্রফুল্ল। (উঠিয়া দাঁড়াইয়া) আসুন ডাক্তারবাবু।

বল্লভ। হুজুরের অসুখ—ছুটতে ছুটতে আসচি। ওষুধটা খাওয়ানো হয়েছে ত?

এককড়ি। হয়েচে ডাক্তারবাবু, তখ্‌খুনি হয়েছে। ওষুধের শিশি হাতে উঠি ত পড়ি করে ছুটে এসেছি।

[বল্লভ কাছে আসিয়া বসিল। কিছুক্ষণ ধরিয়া নাড়ী পরীক্ষা করিয়া মুখ বিকৃত করিল। মাথা নাড়িয়া প্রফুল্লকে ইঙ্গিতে জানাইল যে অবস্থা ভালো ঠেকিতেছে না]

এককড়ি। (আকুল-কণ্ঠে) কি হবে ডাক্তারবাবু! খুব ভাল জোরালো একটা ওষুধ দিন—আমরা ডবল ভিজিট দেব—যা চাইবেন দেব—

প্রফুল্ল। যা চাইবেন দেব? শুধু এই? সে আর কতটুকু এককড়ি? আমরা তারও অনেক, অনেক বেশি দেব। আমার নিজের প্রাণের দাম বেশি নয়, কিন্তু সে দেওয়াও ত আজ অতি তুচ্ছ মনে হয় ডাক্তারবাবু।

বল্লভ। (উপরের দিকে মুখ তুলিয়া) সমস্তই ওঁর হাতে প্রফুল্লবাবু, নইলে আমার আর কি! নিমিত্তমাত্র। লোকে শুধু মিথ্যে ভাবে বৈ ত না যে, চণ্ডীগড়ের বল্লভ ডাক্তার মরা বাঁচাতে পারে! ওষুধের বাক্স সঙ্গেই এনেছি, এ-সব ভুল আমার হয় না। চলুন নন্দীমশাই, শিগ্‌গির একটা মিক্‌চার তৈরি করে দিই।