এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

গল্প  :  বছর-পঞ্চাশ পূর্বের একটা কাহিনী         
পরিচ্ছেদ: / 1
পৃষ্ঠা: / 10
শুভ সংবাদে সেইখানে দাঁড়িয়ে লাফাতে লাগলাম। আমি চেঁচিয়ে বললাম,—ওরে ধরে আনো নয়নদা, আমি ঠেঙিয়ে মারব। তুমি মেরে ফেলো না যেন।

—না দাদা, তুমিই মেরো।

আবার একটা করুণ ধ্বনি কানে এলো, বোধ করি নয়নের লাঠির খোঁচার ফল। মিনিট-দুই পরে দেখি একটা লোক খোঁড়াতে খোঁড়াতে আসচে, তার পিছনে নয়নচাঁদ। কাছে এসে হাঁউমাউ করে কেঁদে উঠে আমার পা জড়িয়ে ধরলে। নয়ন টান মেরে তারে তুলে দাঁড় করালে। এখন তার মূর্তি দেখে আমি ভয়ে শিউরে উঠলাম। মুখে তার কালি মাখানো, তাতে সাদা সাদা চুনের ফোঁটা দেওয়া। যেমন রোগা তেমনি লম্বা, পরনে শতচ্ছিন্ন ন্যাকড়া। তখনও কাঁদছিল। তার গালে নয়ন প্রচণ্ড এক চড় মেরে বললে,—চুপ কর্‌ হারামজাদা! যা জিজ্ঞাসা করি সত্যি জবাব দে। ক'জন ছিলি? তাদের কি নাম, কোথায় ঘর বল্‌?

লোকটা প্রথমে বলতে চায় না, কিন্তু পিঠে একটা গুঁতো খেয়ে সঙ্গীদের নাম-ধাম গড়গড় করে বলে গেল।

নয়ন বললে,—মনে থাকবে, ভুলবো না। এখন বল্‌, বোষ্টম ঠাকুর পড়ে গেলে নিজে তুই ক'ঘা বাড়ি দিয়েছিলি?

পাঁচ-সাত ঘা হবে বোধ হয়।

নয়নচাঁদ দাঁত কড়মড় করে বললে, আচ্ছা,—পাঁচ-সাত ঘা-ই সই। এবার ঠিক তেমনি করে শো, যেমন করে বোষ্টম ঠাকুরকে শুয়ে থাকতে দেখলাম। দাদাভাই, এগিয়ে এসো,—ঐ খেঁটে দিয়ে পাঁচ-সাত ঘায়েই সাবাড় করা চাই কিন্তু। দেখবো কেমন হাতের জোর। তুই ব্যাটা দেরি করচিস্‌ কেন? শুয়ে পড়—বলেই তার কান ধরে টেনে রাস্তায় বসালে। এবং নিজে সে শোবার পূর্বেই প্রচণ্ড গোটা দুই-তিন লাথি পিঠে মেরে পথের ধুলোর পরে লুটিয়ে দিলে। বললে,—দেরি করো না দাদা, মাথা তাক করে মারো। দু-তিন ঘার বেশী লাগবে না।

নয়নদার গলার স্বর গেল বদলে, চোখ-মুখ যেন আর কার। চেহারা দেখে গায়ে কাঁটা দিলে, নতুন খেলা শুরু করবো কি, ভয়ে হাত-পা কাঁপতে লাগল, কাঁদ-কাঁদ হয়ে বললাম,—আমি পারবো না, নয়নদা।

পারবে না? তবে আমিই শেষ করে দিই।

না নয়নদা, না, মেরো না।

কিন্তু, লোকটা লাথি খেয়ে সেই যে শুয়ে পড়েছিল, আর নড়েচড়েনি। প্রাণভিক্ষেও চায়নি—একটা কথা পর্যন্ত না।

বললাম,—চলো, ওরে বেঁধে নিয়ে থানায় ধরিয়ে দিই গে।