এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

উপন্যাস  :  বিপ্রদাস         
পরিচ্ছেদ: / 26
পৃষ্ঠা: / 151
বিপ্রদাসের পত্র পাইয়া রে-সাহেব এক সপ্তাহের ছুটি লইয়া বলরামপুরে আসিয়া উপস্থিত হইলেন এবং মেয়েকে দ্বিজুর হাতে অর্পণ করিয়া আবার কর্মস্থলে ফিরিয়া গেলেন।

এ বিবাহে নহবৎ বাজিল না, বরযাত্রী-কন্যাযাত্রীর বিবাদ বাধিল না, মেয়েরা উলু দিল অস্ফুটে, শাঁক বাজিল চাপা সুরে,—বাসরগৃহ রহিল স্তব্ধ, মৌন।

নিরালা কক্ষে দ্বিজদাসের বিষণ্ণ মুখের পানে চাহিয়া বন্দনা প্রশ্ন করিল, কি ভাবচো বলতো?

দ্বিজদাস বলিল, ভাবচি তোমার কথা, ভাবচি আমার চেয়ে তুমি অনেক বড়।

কেন?

নইলে পারতে না। সর্বনাশ বাঁচাতে কি দুঃখের পথ হেঁটেই না তুমি আমার কাছে এলে।

বন্দনা জিজ্ঞাসা করিল, তুমি আসতে না?

না।

বন্দনা বলিল, মিছে কথা। কিন্তু আমি কি ভাবছিলুম জানো? তোমার গলায় মালা পরিয়ে দিতে দিতে ভাবছিলুম, আমি এমন-কি সুকৃতি করেছিলুম যাতে তোমার মত স্বামী পেলুম। পেলুম বাসুকে, মাকে, বড়দাকে। আর পেলুম এই বৃহৎ পরিবারের বিপুল ভার। কিন্তু যে সমাজের মেয়ে আমি, তার প্রাপ্য কতটুকু জানো?

দ্বিজদাস কহিল, না।

বন্দনা বলিতে গিয়া হঠাৎ থামিয়া গেল। কহিল, কিন্তু আজ নয়। নিজের পরম সৌভাগ্যের দিনে অন্যের দৈন্যকে কটাক্ষ করবো না। অপরাধ হবে।

হবে না, তুমি বলো।

বন্দনা মাথা নাড়িয়া অস্বীকার করিল, কহিল, আজ তুমি ক্লান্ত, একটু ঘুমোও, তোমার মাথায় আমি হাত বুলিয়ে দিই।

মিনিট-দুই পরে বলিল, আমার মেজদির কথা মনে পড়ে। সেদিন বড়দার সঙ্গে তখনি চলে যেতে চাইলেন দেখে বললুম, তুমি ত ঝগড়া করোনি মেজদি, তুমি কেন যাবে? মেজদি বললেন, যেখানে স্বামীর স্থান হয় না, সেখানে স্ত্রীরও না। একটা দিনের জন্যেও না। তোর স্বামী থাকলে এ কথা বুঝতিস। সেদিন হয়ত ঠিক এ কথা বুঝিনি, কিন্তু আজ বুঝচি তুমি না থাকলে আমি একটা দিনও সেখানে থাকতে পারিনে।

একটু থামিয়া বলিল, এই ত মাত্র ঘণ্টা-কয়েক আগে, পুরুতের সঙ্গে গোটা-কয়েক শব্দ উচ্চারণ করে গেলুম, কিন্তু মনে হচ্ছে যেন আমার দেহের প্রতি রক্তকণাটি পর্যন্ত বদলে গেছে।

দ্বিজদাস চোখ মেলিয়া তাহার মুখের পানে চাহিল। তাহার হাতখানি নিজের বুকের উপর টানিয়া লইয়া আবার চোখ বুজিল। কোন কথা কহিল না।

রবিবার ঘুরিয়া আসিল। বিপ্রদাস ও দয়াময়ীর যাবার দিন আজ। তীর্থভ্রমণ দয়াময়ীর একদিন সমাপ্ত হইবে, সেদিন সংসারের আকর্ষণ হয়ত এই গৃহেই আবার তাঁহাকে টানিয়া আনিবে; কিন্তু যাত্রা শেষ হইবে না আর বিপ্রদাসের, আর ফিরাইয়া আনিবে না তাঁহাকে এ গৃহে। এ কথা শুনিয়াছে অনেকে। কেহ বিশ্বাস করিয়াছে, কেহ করে নাই।